আমি প্রচণ্ড মানসিক অশান্তিতে আছি। আমার তিন বছরের একটা বাচ্চা আছে এবং আমি শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে থাকি। আমার স্বামী আমার শাশুড়ি’র কথাই বেশি শোনে। তার কাছে আমার শাশুড়িই সবসময় ঠিক আর আমি ঠিক হলেও ভুল।
আমার শাশুড়ি একটু অপরিষ্কার টাইপের। আমি কোন জিনিস পরিষ্কার করে রাখলে দেখা যায় উনি সেটা নোংড়া করে রাখলেন। উনি আমার বাচ্চাটার সাথেও চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। আমার স্বামীকে এসব বললে, সে বলে ‘অ্যাডজাস্ট কর’। কিছু বিষয় আছে যা চেষ্টা করলেও অ্যাডজাস্ট করা যায় না। ও আমাকে কখনোই সাপোর্ট করে না। আমি অনেক কষ্টে আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যাই। কয়েকবার ঘুমের ঔষধও খেয়েছি তবে বেশি না, শুধু আমার স্বামীকে আমার কষ্টটা বোঝানোর জন্য। আরো অনেক বিষয় আছে যা আমি লিখে বলতে পারছি না। যতটুকু পারলাম লিখলাম। আমাকে একটু হেল্প করবেন প্লিজ? কেউ আমার কষ্টটা বোঝে না। আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না। প্লিজ হেল্প, আর বেশীদিন এভাবে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব। আমি আমার সব কথা যদি লিখতে পারতাম তাহলে ভাল হত। আরো অনেক বিষয় আছে। প্লিজ হেল্প।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আমাদের পরামর্শ
প্রথমেই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সাধুবাদ জানাচ্ছি আমাদের কাছে মানসিক সহায়তা চাওয়ার জন্য। আপনার এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে যে আপনি আপনার সমস্যাটি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রচন্ড চেষ্টা করছেন। আপনি হাল ছেড়ে দেননি। আর কোন একটি সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এই ইচ্ছা বা সচেতনতার জায়গাটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
যৌথ পরিবারে সবার সাথে মানিয়ে চলে ভাল থাকতে হলে অনেক দৃঢ় মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। আপনার লেখা পড়ে বোঝা যাচ্ছে, বিভিন্ন কারণে আপনি এবং আপনার শাশুড়ি দুইটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছেন যা মানসিকভাবে পীড়াদায়ক এবং অস্বস্তিকর। আর আপনার প্রতি স্বামীর সমর্থন এবং সহযোগিতা যথাযথ না থাকায় আপনি আরো বেশি মানসিক অশান্তি এবং যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে সন্তান লালন-পালনের প্রথম কয়েক বছর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ বা পারিবারিক অশান্তি অন্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। কেননা সন্তান লালন-পালন খুব বড় একটি দায়িত্বের নাম। এই সবকিছু মিলিয়েই আপনি মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতায় ভুগছেন।
আপনি লেখা থেকে বুঝেছি
- আপনার আরও অনেক কিছু বলার আছে যা এখানে লেখা সম্ভব হয়নি
- মাঝে মাঝে আপনার মরেও যেতে ইচ্ছে করে এবং
- কষ্টের সময়ে স্বামীকে পাশে পাবার লক্ষ্যে আপনি কয়েকবার ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিজেকে আঘাত করেছেন
এই তিনটি পয়েন্টের ভিত্তিতে বলব, প্লিজ, জরুরি ভিত্তিতে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ’র (সাইকিয়েট্রিস্ট) পরামর্শ নিন। সাথে যত দ্রুত সম্ভব আপনি সরাসরি কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করুন। আপনার সমস্যা বা পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে যার জট খুলে এক এক করে সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। বিষণ্ণতার মাত্রা বেশি থাকলে আপনার ঔষধেরও প্রয়োজন হতে পারে।
অনেক সময় বর্তমান সমস্যাগুলোর সাথে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব এবং নেতিবাচক অতীত অভিজ্ঞতার সংযোগ থাকে। আপনার ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটছে কি-না তাও দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
এই মুহূর্তে আপনার কি করণীয় সে ব্যাপারে তিনটি কথাই বলব
১। নিজের যত্ন নিন। যেমন, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা (যেমন হাটা, যোগব্যায়াম, রিলাক্সেশন ইত্যাদি)
২। আজ এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে, নিজের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে ভালবাসতে শুরু করুন।
৩। কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণের মাধ্যেমে আপনার সমস্যার জট খুলে এক এক করে সমাধানের চেষ্টা করুন এবং একটি প্রশান্তিপূর্ণ জীবনের কৌশলগুলি রপ্ত করুন।
প্রত্যেকটি মানুষের মত আপনিও একজন মুল্যবান মানুষ। আপনার জীবনেরও ভীষণ সুন্দর একটা অর্থ রয়েছে, গুরুত্ব রয়েছে। অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

রাউফুন নাহার
রাউফুন নাহার মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে এবং অনার্স করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। বর্তমানে এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভালোবাসেন মানুষ, প্রকৃতি আর তাদের ভেতরের অন্তর্নিহিত সুরকে।
- রাউফুন নাহার#molongui-disabled-link
- রাউফুন নাহার#molongui-disabled-link
- রাউফুন নাহার#molongui-disabled-link
- রাউফুন নাহার#molongui-disabled-link