বিস্তারিতভাবে প্রশ্নটি তুলে ধরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিপরীত লিঙ্গের কোন মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার। মানুষ বিভিন্নভাবে এই যৌনাকষর্ণের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কেউ প্রত্যক্ষ যৌনকর্মে অংশ নেন, আবার কেউ পরোক্ষভাবে (যেমনঃ হস্তমৈথুন) যৌন চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। পরোক্ষভাবে যৌন চাহিদা মেটানোর অনুষঙ্গ হিসেবে সাধারণত পর্ণগ্রাফি, উত্তেজক ছবি কিংবা কল্পনাকে বেছে নেবার প্রবণতা দেখা যায়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ-যে প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন, স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সেটি একটি সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হতে থাকে। মানুষের চিরায়ত যৌনকর্ম সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত বা আংশিক ধারণা তৈরি হয় যেটি পরবর্তীতে দাম্পত্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া পরোক্ষ যৌনাচার স্বাভাবিকতার মাত্রা হারিয়ে একটা সময়ে আসক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় এবং এই আসক্তি থেকে বের হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমনটা হচ্ছে আপনার ক্ষেত্রে। শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত, সামাজিক এমনকি পেশাগত জীবনেও এই আসক্তির বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে। মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে ঘুমের সমস্যা, অবসাদ, অপরাধবোধ, হতাশা ইত্যাদি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
তাছাড়া দীর্ঘদিন একটি নির্দিষ্ট অভ্যাসের কারণে আসক্তির ধরণেও পরিবর্তন আসে যার কারণে বিকল্পভাবে আসক্তি মেটানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে (যেমনঃ পর্ণগ্রাফি থেকে ইন্টারনেটে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি দেখা, টেলিভিশন বা পত্রিকার ছবি দেখা)। সঠিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবীর (সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট) সাহায্য নিলে এই “অবসেশন” সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যে যে বিষয়গুলো এই অবসেশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেই বিষয়গুলো চিহ্নিত করে কার্যকরী কৌশল আয়ত্ব করে এবং সুস্থ্য জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুশীলন করলে নিশ্চিতভাবেই এই সমস্যাকে মোকাবিলা করা যায়।
আপনি দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটে যোগাযোগ করলে সেবা পাওয়া যাবে। আপনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্র-শিক্ষক পরামর্শদান দফতর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করলেও বিনামূল্যে কাউন্সেলিং অথবা সাইকোথেরাপির সেবা পাবেন। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও সেই সেবা পাবেন।
আপনার জন্য শুভকামনা।