মেয়েদের ছবি দেখার অভ্যাসটি ছাড়তে পারছি না।

আমার বয়স ২৭ বছর। ১৬ বছর বয়সে আমি প্রথম হস্তমৈথুন করি। এরপর নিয়মিত স্বল্পমাত্রায় (সপ্তাহে ২/৩ বার) হস্তমৈথুন করতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ি। বর্তমানে মাসে ২/৩ বার করি। হস্তমৈথুনের জন্যে উত্তেজিত হতে আমি সুন্দরী নারী দেহ দেখতাম। তবে পর্ণ দেখতাম না। অর্থাৎ, সরাসরি যৌনক্রিয়া দেখতাম না। এভাবে আমি ধীরে নারীদেহের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। ইন্টারনেটে নানান ধরনের মেয়েদের ছবি দেখা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। এমনকি হস্তমৈথুন না করলেও আমি প্রায় প্রতিদিনই মেয়েদের নগ্ন কিংবা অর্ধনগ্ন ছবি দেখি। এমনকি হস্তমৈথুনও আমার অতটা ভালো লাগে না যতটা আমার মেয়েদের ছবি দেখতে ভালো লাগে। ফলে প্রায় রাতেই আমি ঘন্টার পর ঘন্টা মেয়েদের ছবি দেখতে থাকি। এতে আমার ঘুমে খুব ব্যাঘাত ঘটছে। এই নেশাটা দূর করতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দিয়েছি। মোবাইল বন্ধ করে রাখি। তবু মাঝরাতে ঠিকই ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং তখন খুব ইচ্ছে করে মেয়েদের ছবি দেখতে থাকি। এরপর আর ঘুম আসে না। আমি কখনো পুরনো পত্রিকা, কখনো বা টেলিভিশনে নারীদেরকে দেখতে থাকি ভোর পর্যন্ত। কিন্ত এভাবে আমার তৃপ্তি আসে না। অনলাইনে হাজার হাজার মেয়েদের দেখলেই কেবল তৃপ্তি পাই। 

উল্লেখ্য, আমি বাস্তব জীবনে নারী সঙ্গ বিবর্জিত থেকেছি দীর্ঘ সময়। শৈশব কৈশোরে কোনো মেয়ে বন্ধু ছিলো না। কিন্ত মেয়েদের প্রতি খুব আকর্ষণ বোধ করতাম। তবে রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান বলে আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না মেয়ে বন্ধু পাওয়ার। ফলে আমি এই সময়টায় খুব কল্পনাপ্রবণ হয়ে কাটাই। সারাদিনই কল্পনা করতাম আমার কোনো মেয়ে বন্ধু আছে, স্ত্রী আছে। কল্পনাতেই তাদের সাথে গল্প করতাম, তাদেরকে ভালোবাসতাম। এরপর প্রথম হস্তমৈথুনের পর থেকেই প্রতিদিন দেখতে শুরু করি মেয়েদের ছবি। বিশেষকরে নারীদেহের স্তনের প্রতি আমি অবসেসড হয়ে পড়ি। আমি ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু স্তনের ছবি দেখে কাটাতে পারি। আমার প্রশ্ন হলো আমার এই অবসেশন কি ভবিষ্যতে সরাসরি যৌনমিলনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে? যৌনমিলনের প্রতি আমার খুব একটা আকর্ষণ কাজ করে না। আমার শুধু ইচ্ছে করে স্তন দেখতে, স্তন স্পর্শ করতে, নারীদেহকে জড়িয়ে ধরতে, নারীদেহে চুম্বন করতে। উল্লেখ্য, বর্তমানে আমি অবিবাহিত। তবে গত কয়েক বছরে একাধিক মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়। বর্তমানে আমার একজন প্রেমিকাও আছে। আমার সাথে মেয়েদের বন্ধুত্বের বা প্রেমের সম্পর্ক খুবই হৃদ্যতাপুর্ণ হয়। বন্ধুত্ব বা প্রেম যেকোনোক্ষেত্রেই মেয়েরা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। বর্তমানে আমি তেমন একটা নিঃসঙ্গতা অনুভব করি না। কিন্তু এখনো আমি আমার মেয়েদের ছবি দেখার অভ্যাসটি ছাড়তে পারছি না। এজন্যে মাঝেমাঝে খুবই হতাশ লাগে। অপরাধবোধ জাগে। মনে হয় আমি আমার প্রেমিকার সাথে প্রতারণা করছি। কিন্তু আমি আমার প্রেমিকাকে খুবই ভালোবাসি। আর যে মেয়েদের ছবি আমি অভ্যাসবশত দেখি তাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা অনুভব করি না। শুধুই সাময়িক যৌন উত্তেজনাবোধ করি কিছুক্ষণ। আমি আমার এই অবসেশন থেকে মুক্তি পেতে চাই। কীভাবে পেতে পারি দয়াকরে জানাবেন।

আমাদের পরামর্শ

বিস্তারিতভাবে প্রশ্নটি তুলে ধরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিপরীত লিঙ্গের কোন মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার। মানুষ বিভিন্নভাবে এই যৌনাকষর্ণের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কেউ প্রত্যক্ষ যৌনকর্মে অংশ নেন, আবার কেউ পরোক্ষভাবে (যেমনঃ হস্তমৈথুন) যৌন চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। পরোক্ষভাবে যৌন চাহিদা মেটানোর অনুষঙ্গ হিসেবে সাধারণত পর্ণগ্রাফি, উত্তেজক ছবি কিংবা কল্পনাকে বেছে নেবার প্রবণতা দেখা যায়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ-যে প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন, স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সেটি একটি সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হতে থাকে। মানুষের চিরায়ত যৌনকর্ম সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত বা আংশিক ধারণা তৈরি হয় যেটি পরবর্তীতে দাম্পত্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া পরোক্ষ যৌনাচার স্বাভাবিকতার মাত্রা হারিয়ে একটা সময়ে আসক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় এবং এই আসক্তি থেকে বের হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমনটা হচ্ছে আপনার ক্ষেত্রে। শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত, সামাজিক এমনকি পেশাগত জীবনেও এই আসক্তির বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে। মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে ঘুমের সমস্যা, অবসাদ, অপরাধবোধ, হতাশা ইত্যাদি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

তাছাড়া দীর্ঘদিন একটি নির্দিষ্ট অভ্যাসের কারণে আসক্তির ধরণেও পরিবর্তন আসে যার কারণে বিকল্পভাবে আসক্তি মেটানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে (যেমনঃ পর্ণগ্রাফি থেকে ইন্টারনেটে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি দেখা, টেলিভিশন বা পত্রিকার ছবি দেখা)। সঠিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবীর (সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট) সাহায্য নিলে এই “অবসেশন” সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যে যে বিষয়গুলো এই অবসেশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেই বিষয়গুলো চিহ্নিত করে কার্যকরী কৌশল আয়ত্ব করে এবং সুস্থ্য জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুশীলন করলে নিশ্চিতভাবেই এই সমস্যাকে মোকাবিলা করা যায়। 

আপনি দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটে যোগাযোগ করলে সেবা পাওয়া যাবে। আপনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্র-শিক্ষক পরামর্শদান দফতর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করলেও বিনামূল্যে কাউন্সেলিং অথবা সাইকোথেরাপির সেবা পাবেন। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও সেই সেবা পাবেন। 

আপনার জন্য শুভকামনা। 

ওমর ফারুক
+ posts

ট্রেইনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন । মানুষের কথা শুনতে ভালোবাসেন । মানসিকতার বৈচিত্র্যতায় অবাক হন । মানুষিক বৈচিত্রতায় শব্দ এবং অনুভূতির রঙ চড়াতে পছন্দ করেন। অজানা,অজ্ঞাত, অরূপ বিষয় যা এখনো রহস্য হয়ে আছে সেখানে যুক্তির,মানবিকতার আলো ছড়ানোর প্রয়াসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।

Post Author: ওমর ফারুক

ট্রেইনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন । মানুষের কথা শুনতে ভালোবাসেন । মানসিকতার বৈচিত্র্যতায় অবাক হন । মানুষিক বৈচিত্রতায় শব্দ এবং অনুভূতির রঙ চড়াতে পছন্দ করেন। অজানা,অজ্ঞাত, অরূপ বিষয় যা এখনো রহস্য হয়ে আছে সেখানে যুক্তির,মানবিকতার আলো ছড়ানোর প্রয়াসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।