আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন প্রবাসী। আজ থেকে ঠিক সাত (৭) মাস আগে একটা সমস্যায় আমার জীবনটা একরকম এলোমেলো হয়ে যায়। একদিন আমি খেয়াল করলাম, আমার বারবার প্রেসার লো হয়ে যাচ্ছে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাই। উনি আমার সাথে কথা বলে আমাকে কয়েকটা পরীক্ষা দেন। আমাকে কি পরীক্ষা দিলো তা দেখতে আমি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম। তখন দেখি এগুলো সব বড় বড় রোগের পরীক্ষা। হঠাৎ আমার আস্তে আস্তে ভয়ে গলা জ্যাম হয়ে যায়। সেই থেকে সমস্যার শুরু- আমার হঠাৎ ভয় চলে আসে মাথায়, তখন আমার গলা জ্যাম হয়ে যায়, প্রচন্ড আতংকে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমার অন্য সমাস্যগুলো নেই । কিন্তু ভয়টা আমার হঠাৎ করে চলে আসে তখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ডাক্তার বলে এগুলো আমার টেনশন থেকে হচ্ছে, আমার কোনো রোগ নেই। দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করবেন।
আমাদের পরামর্শ
প্রিয় প্রশ্নকারী, ওলাইকুমা-সালাম। প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার প্রশ্নের জন্য। আপনি দীর্ঘ একটি সময় ধরে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে আপনাকে সহানুভূতি জানাচ্ছি। আপনি বলেছেন যেকোনো ভয় বা দুশ্চিন্তার সময় আপনার বেশ তীব্র কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে গলা আটকে আসা, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে আপনার চিকিৎসকের কথার সূত্র ধরেই বলি, আমাদের মানসিক বা আবেগীয় অবস্থার সাথে আমাদের শারীরিক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার বেশ গভীর একটি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মানসিক এবং আবেগীয় অনুভূতির কেন্দ্র কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক বা ব্রেন। যখনই আমরা তীব্র আতংক বা দুশ্চিন্তায় থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেমন- ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদিতে সংকেত পাঠায়। যার ফলে সেসময় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়, হাত-পা কাপে, ঘাম হয়, বুক ধড়ফড় করে। এটি খুব স্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া, কারো কারো ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়াগুলো তেমন তীব্র হয় না, কারো কারো ক্ষেত্রে তীব্র হয়, যেমনটা আপনার হচ্ছে।
এই অবস্থায় যেটা করলে কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে, তা হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম। গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার মাধ্যমে আমরা সারা শরীরে প্রচুর অক্সিজেন পাঠাই। আর মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমানে অক্সিজেন প্রবেশ করলে মস্তিষ্ক শরীরের বাকি অংশে সংকেত পাঠায় যে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, তখন ভয় বা দুঃশ্চিন্তার শারীরিক যে প্রতিক্রিয়াগুলো হয় তা কমে আসে। যখন আপনি দুশ্চিন্তা বা ভয় অনুভব করবেন, তখন কিছুটা সময় নিয়ে, শরীরকে শিথিল করে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে গভীরভাবে নিঃশ্বাস গ্রহণ করবেন, কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রেখে ধীরে ধীরে একটু শব্দ করে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন (নিচের ভিডিও দেখুন)। এভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকবার চালিয়ে যাবেন। এই সময় আপনার পূর্ণ মনোযোগ থাকবে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে। অন্যকোনো চিন্তা এড়িয়ে যেতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি তীব্র উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, সেই সাথে মনোযোগ বৃদ্ধি করে যুক্তিসম্পন্ন চিন্তা করতেও সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ মিনিট এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি করার মাধ্যমে আপনি সুফল পেতে পারেন। আশা করি আমার পরামর্শ আপনাকে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ চান?আপনার যেকোনো মানসিক সমস্যার সম্ভাব্য দিক নির্দেশনামুলক পরামর্শ দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার মনোবিজ্ঞানীগণ। প্রশ্ন করুণ নিঃশঙ্কোচে। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করুন।
তাহনীনা মেহরীন, এসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে স্নাতক এবং কাউন্সেলিং সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর করে এখন বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্টে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। ছাত্রজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। পড়তে ভালোবাসি, আজকাল টুকটাক লেখালেখি করারও চেষ্টা করছি। তবে মূল আগ্রহ মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ দেয়াতে।
তাহনীনা মেহরীন, এসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে স্নাতক এবং কাউন্সেলিং সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর করে এখন বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্টে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। ছাত্রজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। পড়তে ভালোবাসি, আজকাল টুকটাক লেখালেখি করারও চেষ্টা করছি। তবে মূল আগ্রহ মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ দেয়াতে।