আমি আগে তো এমন ছিলাম না। অনেক হাসতাম, মজা করতাম কিন্তু এখন আমার কিছুই ভাল লাগে না। মনে হয় মরে যাই এক্ষুনি। অনেক স্বপ্ন আর ইচ্ছা ছিল আমার। হয়ত আর পূরণ হবে না সেগুলো। খুব ভাল ছাত্র ছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করছে আমায়। আমার সবকিছু কেরে নিচ্ছে। এখন না পারছি পড়াশুনায় মন বসাতে না পারছি কিছু করতে। নিজেকে এখন সবচাইতে চিপ (সস্তা) মনে হয় আমার। একটা ভুলই আমার পুরা লাইফটাই শেষ করে দিয়েছে, যদিও ভুলটা আমার না পুরোটা। আবার আমি এই ভুলটার জন্য দায়ি না। আমারও তো ইচ্ছে আছে, আমি চাইছিলাম নিজের ইচ্ছে মতো পড়াশোনা করতে কিন্তু সেইটা আর হলো না। এখন ইংরেজি নিয়ে পড়ছি কিন্তু মনে হচ্ছে আমায় দিয়ে এটা হবে না। আমার আর বেঁচে থাকতেই ইচ্ছে করতেছে না এই দুনিয়ায়। জানি, আমি আত্মহত্যা করলে আম্মু কষ্ট পাবে অনেক কিন্তু একটা বেকার ছেলে হয়েও আর কারো বোঝা হয়ে সারা জীবন কাটাতে চাই না। তাই মরে যাওয়া ছাড়া কিছুই অপশন (বিকল্প পথ) নাই। এর আগে অনেকবার আত্মহত্যা করতে চাইছি কিন্তু পারি নাই। এখন আর এইসব সহ্য হচ্ছে না আমার একেবারেই। আমি এখন শুধু মরতে চাই।
বয়স ২১, ছেলে
আমাদের পরামর্শ
জীবনের এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে থেকেও যে আপনি মনোযোগী মন-এ আপনার মনের ভাব প্রকাশ করেছেন, তার জন্য অসংখ্য সাধুবাদ। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তিকে সহায়তা এবং মনোযোগ দিতে মনোযোগী মন সদা সচেষ্ট। আপনার লেখার প্রকাশ থেকে বুঝতে পারছি, আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো একটি ঘটনা আপনার ভেতরের সত্ত্বাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে; আপনার চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে; দিনে দিনে আপনাকে প্রচন্ড বিষণ্ন করে তুলছে। বিষণ্নতার বেশ কয়েকটি লক্ষণও আপনার চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন, নিজের সম্পর্কে খুব বেশি নেতিবাচক ধারনা, জীবন নিয়ে প্রচণ্ড হতাশাবোধ, অপরাধবোধ, অসহায়ত্ববোধ এবং প্রবল আত্মহত্যা প্রবণতা। তবে এখানে একটু বলা প্রয়োজন যে, ঘটনাটি কি বা কবে ঘটেছিল, কে বা কারা ঐ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল, আপনি ঠিক কত দিন ধরে এই ধরনের সমস্যা অনুভব করছেন, কবে থেকে আপনার ভেতর আত্মহত্যা প্রবণতা লক্ষ করছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো বিস্তারিত জানালে আপনার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ আরও একটু সহজ হতো।
যাইহোক, একটি বিষয় আপনার লেখা থেকে অনুধাবন করা যাচ্ছে – বর্তমানে শিক্ষাগত অবস্থান নিয়েও আপনি প্রচণ্ড হতাশা এবং আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছেন। বর্তমানের নেতিবাচক অনুভূতি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দিচ্ছে, বিশেষ করে ভবিষ্যতে আপনার পেশাগত অবস্থান কী হবে তা নিয়ে। ফলশ্রুতিতে বর্তমান সময়কে আপনার অসহ্য মনে হচ্ছে, জীবনকে দুর্বিষহ মনে হচ্ছে। প্রায়শই আপনি আত্মহত্যার কথা ভাবছেন।
প্রথমত, আপনার অনুভূতির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলতে চাই যে, মনোযোগী মনে আপনি লিখেছেন, নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, এটা কিন্তু খুব সূক্ষ্ম স্তরে নিজের জীবনের প্রতি আপনার মায়া এবং ভালবাসাকেই প্রকাশ করে, যা প্রত্যেক মানুষের জীবনধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে হচ্ছে আপনি একটু হলেও নিজেকে ভালবাসেন। শুধু তাই না একটা জায়গায় আপনি আপনার পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে, আপনার মায়ের অনুভূতির প্রতিও সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন। তবে আপনি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচণ্ড দ্বন্দ্বে ভুগছেন। আপনার সমস্যা সমাধানের বাস্তবিক কোনো পথ বা আপনার ভাষায় বিকল্প কোনো পথ দেখতে পারছেন না। এক্ষেত্রে একটি কথা বলতে চাই, একটি জীবন গড়ে উঠে অনেক পথের সমারোহে এবং জীবনের গতিশীলতায়ও বিভিন্ন পথ থাকে। আমরা যখন প্রচণ্ড হতাশ বা বিষণ্ন থাকি, তখন বিকল্প পথগুলো নিয়ে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে পারে না। তাই আপনাকে বলব, তৎক্ষণাৎ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে একটু সময় নিন, নিজের মনের একটু যত্ন নিন, দেখবেন বিকল্প পথগুলো আপনার চোখের সামনে প্রতীয়মান হচ্ছে। আপনার মনের যত্ন নিতে সাহায্য করতে পারে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী যেমন, কাউন্সেলিং বা ক্লিনিক্যাল বা এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট, মনোচিকিৎসক। আপনার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বলব, অতিসত্বর একজন পেশাদার সাইকোলজিস্টের কাছে সরাসরি দেখা করুণ।
কারণ প্রথমেই বলেছি, আপনার সার্বিক আচরণ আর চিন্তা চেতনার ভেতর বিষণ্নতার লক্ষণগুলো প্রতীয়মান। বিষণ্নতা খুব পরিচিত একটি মানসিক সমস্যা এবং এই সমস্যার চিকিৎসা বিদ্যমান। এক্ষেত্রে একজন পেশাগত মনোবিজ্ঞানী আপনাকে কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করবেন। আপনার সমস্যার উৎস এবং তা বিশ্লেষণে আপনার পাশে থাকবেন এবং আপনি যাতে আপনার সমস্যা সমাধানে বিকল্প পথগুলো দেখতে পারেন এবং সে অনুযায়ী বাস্তবিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে লক্ষ্যে পেশাগত সহায়তা দিবেন। প্রয়োজনবোধে একজন মনোচিকিৎসকের নিকট রেফার করবেন।
আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই- আপনি বর্তমানে ২১ বছরের একজন যুবক এবং এখনও একজন ছাত্র। পেশাগত জীবনে যে আপনি বেকার থাকবেন, তা এখনই ধরে নিচ্ছেন এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। কিন্তু আমরা কেউ কি খুব নিকট ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও হুবহু জানি বা সঠিকভাবে বলতে পারি? তা আসলে সম্ভব নয়! তাই অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ভেবে বর্তমানের ইতিবাচক অনুভূতিকে আলিঙ্গন করতে ক্ষতি কি?
আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
ইরফানা সামিয়া
আমি একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী এবং সাইকোথেরাপিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান-এ স্নাতক, পেশাগত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং এম ফিল সম্পন্ন করেছি। তাছাড়া ভারত থেকে কাউন্সেলিং বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছি। দীর্ঘ ১৩ বছর কাউন্সেলিং পেশার সাথে যুক্ত আছি। বর্তমানে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সিনিয়র কাউন্সেলর হিসাবে কাজ করছি।
1 thought on “আমি এই ভুলের জন্য দায়ি না”
Astik Hazra
(অক্টোবর 3, 2019 - 12:36 অপরাহ্ন)আমি আজ থেকে 2 বছর আগে চাকুরী করতাম, সেখানে খুব activ ছিলাম, তাই হয়ত আমার সহকারীরা বা রাজনৈতিক ভাবে আমাকে বিভিন্ন মানসিক নিযার্তন হতে হতো, এই চাপ সহ্য করতে না পেরে চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই কিন্তু তার আগেই কোনো এক অজানা কারণে আমাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়, অবশ্য বরখাস্ত হওয়ার আগেই আমি একটি ব্যবসা খুলি যাতে আমাকে বেকার থাকতে না হয়, ব্যবসা খুব ভালোই চলছিল কোনোদিন চাকুরী চলে যাওয়ার অনুভব হয়নি, বর্তমানে আমি খুব হতাশাগ্রস্ত সবসময় আত্মহত্যা করার ইচ্ছা আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে কারণ এই ব্যবসা করতে গিয়ে আমি কিছু ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি ও ব্যবসা মন্দা, এই ঋণ পরিশোধ করাটা আমার কাছে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে, যদিও আমি অনেকের কাছ থেকে আমার ব্যবসার বকেয়া বাবদ যা ঋণ আছে তার 85% পাবো, কিন্ত সেই টাকা ওই মানুষগুলোর কাছে চাইতে গেলে লম্বা date দিচ্ছে, সেই date -এ যখন আবার চাইতে যাচ্ছি কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে আবার date দিচ্ছে, আমি কাউকে কোনো অবস্থাতেই খারাপ করে বলতে পারিনা, এদিকে আমার পাওনাদাররা আমাকে প্রচুর চাপ দিচ্ছে, যদিও ওটা তাঁদের অবশ্যই কোনো দোষের নয়, আমার প্রাপ্য টাকার কোথাও তাঁদের বলেছি তারাও কিছু সময় দিয়েছিলো কিন্তু এখন আমাকে ধান্দাবাজ ভাবছে, এদিকে আমার পরিবারে আমার মা-বাবা ও আমার স্ত্রী ও এক 7 বছরের সন্তান আছে, আমি আমার এক পাড়ার কাকিমার কাছ থেকে শুনেছি মা -বাবা আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন, জ্ঞান হওয়ার পরের ঘটনা তো জানা, তাই পরিবারের কথাও আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে