আমি অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। সামনের বছর আমার অনার্স শেষ হবে। বয়স ২২। কোচিং এ ক্লাস নেয়া নিয়ে আমার সমস্যা আছে। কোচিং এ ক্লাস নেয়া দরকার। এছাড়া অন্যকোন বেটার জব বা অন্যকিছু করার নাই। কিন্তু আমার একেবারেই ইচ্ছা (কোচিং এ ক্লাস নিতে) করে না। জানি না কেন, অন্যের কোচিং এ ক্লাস নিতে আমি কমফোর্ট ফিল করি না, নিজেকে তুলে ধরতে পারিনা। ক্লাস নেয়ার কথা ভাবলেও কেমন একটা প্রেশার আর ভয় ফিল করি। আমি ইংরেজী পড়াই, ইন্টার পর্যন্ত পড়াতে পারি।
একটা দৃশ্য ফুটে উঠে যে দাড়িয়ে ক্লাস নিচ্ছি। রুম ভরা ছেলেমেয়েরা, আর আমি নার্ভাস ফিল করছি, শরীরের ভেতরে কাপছে। (বেশি মানুষজন দেখলেই আমার এমন প্রতিক্রিয়া হয়। বিশেষত নাইন-টেন থেকে ইন্টারে এমন ছেলেমেয়ে।) আর মনে মনে কথা বলেই যাচ্ছি, যেটা আমি থামাতে পারছি না। ছেলেমেয়েদের সাথে আই কন্টাক্টে সমস্যা হচ্ছে৷ বিশেষত মেয়েদের ক্লাসে। হাত-পা নাড়াতেও লজ্জা হচ্ছে, এমন অবস্থা! চেয়ারে বসে আছিতো বসেই আছি, পাথরের মত। উঠে দাড়াব কিন্তু জড়তার কারণে ইজিলি উঠতে পারছি না৷ এর আগে কোচিং এ যখন ইংলিশ ফার্স্ট পেপার পড়াতাম তখন আমি দেখলাম আমার কথা বলার ক্ষমতা অত্যন্ত বাজে। মানুষ বোর ফিল করে, ইভেন আমি নিজেই বোর ফিল করি। বইয়ের দিকে তাকিয়ে প্যাসেজ পড়ছি তো পড়ছিই। বইয়ের দিকে তাকিয়ে তো আর পড়ানো যায় না বা ভালো করে ক্লাস নেয়া যায় না। ছাত্রীদের বা ছাত্রদের দিকে তাকাতে হয়, ওদের দিকে চেয়ে কথা বলতে হয়।
তো ছাত্রীদের ক্লাসে দেখা যেত ওদের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় চোখে চোখ পড়তেই আমি নার্ভাস হয়ে যেতাম। লজ্জা লাগত! মানে সোজা কথা ওদের দিকে তাকাতেই পারতাম না। কথা বলাতেও জড়তা, অস্পষ্টতা, তাড়াহুড়া, বাজে অবস্থা। মানে আমি নিজেকে অন্যের সামনে সুন্দর করে তুলে ধরতে পারি না।
আমি সোশ্যলি ডাম্ব ধরনের। বিশেষকরে মেয়েদের ক্লাস নেয়াতে আমার ভয়। ভয়টা হয়, হয়ত লজ্জাজনক কোন সিচুয়েশনে আমাকে পড়তে হবে। লজ্জাজনক সিচুয়েশনটা হতে পারে কথা বলার, আই কন্টাক্টের, বডি ল্যাংগুয়েজ, চলাফেরার। আমার নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগি। আমার মনে হয় আমি দেখতে স্মার্ট না। নতুন পরিবেশে কথা বলতে গেলে গলায় জড়তা, নার্ভাসনেস, ভীতু কন্ঠস্বর… এমনও হয় যে আমি কথা বলার কিছু খুঁজে পাই না। সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় আমার মাইন্ড! এটা এত খারাপ যে ভেতরে ভেতরে কথা বলতেই থাকে…চিন্তা করে যেতেই থাকে। একটার পর একটা। মনে মনে কথা না বললেও ব্রেইনে বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে ব্যস্ত করে রাখে। আমি প্রেজেন্টে থাকি কম। এরচেয়ে উৎকন্ঠা, উদ্বিগ্নতাতে বেশি ডুবে থাকি। আর ঘাম তো আছেই! সত্যি বলতে ঘামের জন্যে আমি নিজেকে নিয়ে আরো বেশি নার্ভাস এবং হীনম্মন্যতায় ভুগি। আমার মনে হয় আমার দুরবস্থার এবং দুর্বলতার কথা আমার সামনের জন বুঝতে পারছে।
এখন বর্তমানে কোন কোচিং এ ক্লাস নিচ্ছি না। যোগাযোগ করলে হয়ে যাবে। যোগাযোগ করছি না কারণ আমার ভয় হয় যে কিছুদিন ক্লাস নিয়ে আমি চলে আসব। এইসব যন্ত্রণার জন্য ক্লাস নিতে পারব না। পরে ঐ কোচিং এর লোকগুলো আমার সম্পর্কে খারাপ ভাববে। এখন মনে হচ্ছে আমার এই বিশ্বাসের কারণেই আমি কোচিং এ ভয় পাচ্ছি, যাচ্ছি না। আর বেকার থেকে অর্থকষ্টে থাকছি।
এর আগে একটা কোচিং এ শুধুমাত্র এমন হয়েছে। ইংলিশ ফার্স্ট পেপার পড়াতাম। 9,10,11,12 ক্লাসের। এই কোচিং এ অনেক স্টুডেন্ট এবং কোচিং ম্যানেজমেন্টও খুব স্ট্রং। এখানে সমস্যা হল আমি ক্লাস একটুও কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আমার আচরণ ছিল ছোট বাচ্চাদের মত! আর নার্ভাসনেস, লজ্জা তো আছেই। ইংলিশ ফার্স্ট পেপার পড়ানোর আসলে কিছু নেই, প্যাসেজ ছাড়া। পড়ানো ছাড়া স্টুডেন্টদের সাথে অন্যকিছু নিয়ে কথা বলা বা গল্প করতে পারতাম না। এজন্য দেখা গেল আমার ক্লাসগুলো সবচেয়ে বোরিং হয়ে গেল। ৪/৫ দিন ক্লাস নেয়ার পর ক্লাসগুলো আমার জন্য এতটা অসহ্যকর আর পীড়াদায়ক হয়ে গেল যে আমি মেসেজে ঐ কোচিং-কে না করে দেই। এটা একটা অত্যন্ত বাজে অভিজ্ঞতা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
আমাদের পরামর্শ
আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ ‘মনযোগী মন’-এ প্রশ্ন করে আপনি আপনার সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনার লেখার যে বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করেছে সেটা হল সমস্যা বিশ্লেষণের বিভিন্ন স্তরে আপনি সমস্যার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, মেয়েদের ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে ভয় বা লজ্জাবোধের কারণ হিসেবে আপনি লিখেছেন “আমার নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতা”। আবার আরেকক্ষেত্রে বলেছেন “সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় আমার মাইন্ড! এটা এত খারাপ যে ভেতরে ভেতরে কথা বলতেই থাকে…চিন্তা করে যেতেই থাকে”। আরও বলেছেন “আমি প্রেজেণ্টে থাকি কম। এরচেয়ে উৎকণ্ঠা, উদ্বিগ্নতাতে বেশি ডুবে থাকি” ইত্যাদি। দেখা যায় যে, বেশিরভাগ মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবে এ ধরনের অনুভুতি (হীনম্মন্যতাবোধ ,অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা বা উদ্বিগ্নতা ), নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ (প্রেজেন্টে না থাকা) কাজ করে থাকে।
আপনি যদিও সরাসরি উল্লেখ করেননি, আপনি আপনার ভেতর কি কি পরিবর্তন দেখতে চাচ্ছেন, কি মাত্রায় দেখতে চাচ্ছেন, আপনার সমস্যার বর্ণনা থেকে ধারণা করছি আপনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেনঃ
১) আপনি সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাঁধা অনুভব করছেন। নিজের কাজ বা দক্ষতাকে অন্যের সামনে তুলে ধরতে ভীতি বা উদ্বিগ্নবোধ করেন। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন এবং সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে এড়িয়ে যান। আপনার বর্ণনানুসারে কোচিং এর ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে, তাঁদের সামনে দাঁড়াতে আপনার নার্ভাস লাগে। আপনি ভয় পান, লজ্জাবোধ করেন। বিশেষত ছাত্রীদের পড়াতে গেলে এই প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে বেড়ে যায়। যেটা আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এবং জীবিকানির্বাহকে বাধাগ্রস্থ করছে। আপনি এই বাঁধাকে অতিক্রম করতে চাচ্ছেন।
২) নিজের সম্পর্কে আপনার অনেকগুলো নেতিবাচক চিন্তা এবং ধারণা কাজ করছে। আপনি হীনম্মন্যতায় ভোগেন। আপনি এই হীনম্মন্যতাবোধ কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছেন।
উপরোক্ত দুইটি বিষয় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করছি।
প্রথমক্ষেত্রে বলা চলে, আপনার ভেতর সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক ভীতি কাজ করছে। সামাজিক ভীতি এমন এক ভীতি, যেখানে ব্যক্তি মনে করে অন্যরা তাকে অবমূল্যায়ণ করছে। লজ্জাজনক বা ভুল কিছু করে ফেলবে, এই আশঙ্কায় থাকে। আসল ভয়টি হল অন্যরা তাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাববে। আর এজন্যই আপনি কোচিং বা অন্য নতুন কোন পরিবেশ এড়িয়ে চলছেন। এতে কিন্তু সমস্যাটি কমছে না বরং বাড়ছে। তাছাড়া এই ভীতি আবার আপনার ভেতর পারফরমেন্স অ্যাংজাইটি তৈরি করছে, যার ফলে ছাত্রছাত্রী পড়ানোর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও, সে কাজটি সহজ এবং সাবলীলভাবে করতে পারছেন না। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস আরো কমে যাচ্ছে। আপনি নিজেকে এবং নিজের দক্ষতাকে খুব ছোট, নগণ্য ভাবছেন। ফলশ্রুতিতে সেই ভয়, লজ্জা ও উদ্বিগ্নতা আপনাকে ঘীরে রাখছে, আপনি এর থেকে বের হতে পারছেন না।
আমি বুঝতে পারছি, বর্তমানে এই আচরণের ওপর হয়ত আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনি চাইলেই এই ভীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। কিন্তু আপনার এই সমস্যা সমাধানে আপনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন। সমস্যার সমাধান মানে সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া না বরং সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসে খুব কাছ থেকে দেখা। সমস্যার উৎসগুলোকে খুঁজে বের করা, উৎসগুলোর সাথে বোঝাপড়া করা এবং উৎস যাই হোক না কেন, যৌক্তিকভাবে সেগুলো সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবা। সর্বোপরি সেগুলো বাস্তব পরিস্থিতিতে অর্থাৎ যেখানে আপনি সমস্যাবোধ করছেন, সেখানে প্রয়োগ করা।
তাই প্রসঙ্গত, আমি কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করছি, যেগুলো হয়ত আপনাকে এই সামাজিকভীতির পটভূমি বুঝতে এবং তা সমাধানে উদ্যোগী হতে সাহায্য করতে পারে। যেমন,
ক) কবে থেকে আপনার ভেতর এ ধরনের ভীতির উদ্রেক হয়েছে অর্থাৎ প্রথম কবে আপনি এই ধরনের ভয় আপনার ভেতর লক্ষ্য করলেন?
খ) আপনি সবসময় মনে করছেন আপনার পড়ানোর স্টাইল বাজে, কিন্তু এটা কি একান্তই আপনার চিন্তা নাকি অন্যকেউ বলেছে? যেমন, আপনার ছাত্রছাত্রীরা কি বলেছে? কখনও কি আপনার ছাত্রছাত্রীদের থেকে জানতে চেয়েছেন, আপনার ক্লাস তাঁদের কেমন লাগে? আর কি কি করলে আপনার ক্লাস নেয়াটা আরও সুন্দর হবে?
গ) মেয়েদের পড়ানোর সময় আপনি অত্যন্ত লজ্জাবোধ করেন। এই লজ্জার পেছনে কি চিন্তা কাজ করে অর্থাৎ আসলে কোন বিষয়ের কথা ভেবে আপনি লজ্জাবোধ করেন?
ঘ) আপনি আপনার পরিবার নিয়ে কিছু জানাননি। কে কে আছেন আপনার পরিবারে? তাঁদের সাথে আপনার সম্পর্ক বা যোগাযোগের ধরন কেমন? বিশেষত, আপনার পরিবারে ক’জন নারী সদস্য রয়েছেন? তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন? তাদের সামনে কি আপনার নিজেকে প্রকাশ করতে লজ্জা বা অন্যকোন ধরনের বাঁধা অনুভব করেন?
ঙ) আপনার স্কুল বা কলেজ জীবনের কথাও কিছু লেখেননি। স্কুল, কলেজে আপনার বন্ধু-বান্ধবী কয়জন ছিল? তাদের সাথে সম্পর্কইবা কেমন ছিল? এখনও কী তাদের সাথে যোগাযোগ আছে? মেয়ে বন্ধু ছিল বা আছে কিনা?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য আপনাকে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করছি। যেমন, প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন প্রদত্ত মানুষের মনোসামাজিক বিকাশের আঁটটি স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে, অন্তরঙ্গতা বনাম একাকিত্ব (Intimacy versus Isolation)। যেটা ২১ বছর বয়স থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত। একজন ব্যক্তি যখন এই স্তরে প্রবেশ করেন, তখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থপূর্ণ এবং অন্তরঙ্গ কিছু সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহবোধ করে। ব্যক্তি যদি সফলভাবে তা করতে পারে, তবে ব্যক্তি নিজেকে এবং অন্যকে ভালবাসে; নিজের এবং অন্যের প্রতি যত্নশীল হতে শেখে। অপরপক্ষে, ব্যক্তি যদি সম্পর্ক তৈরিতে আত্মবিশ্বাসী না হয় এবং নিজেকে নগণ্য ভাবে, তবে পরবর্তীতে হতাশায় এবং একাকীত্বে ভোগে। আপনার বয়স ২২ বছর। অর্থাৎ বন্ধুত্ব গঠনের মাধ্যমে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের পথে পা বাড়ানোর সময়ও এটা। তাই এ বিষয়ে একটু মনযোগী হওয়া যায় কিনা ভেবে দেখবেন।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি আপনার লেখায় গুরুত্ব পেয়েছে, সেটা হচ্ছে প্রায় সব পরিবেশেই আপনি নিজেকে ভীষণভাবে ছোট করে দেখছেন। অন্যভাবে বলা চলে, আপনি নিজেকে শ্রদ্ধা করছেন না; নিজেকে ভালবাসতে পারছেন না। নিজের দক্ষতার উপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন। নিজের প্রতি এই অশ্রদ্ধা, ঘৃণা এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা আপনার ভেতর হীনম্মন্যতাবোধের জন্ম দিচ্ছে এবং আপনি নিজেকে দুর্বল মনে করছেন। সারাক্ষণ অন্যরা আপনার দুর্বলতার কথা জেনে যাবে এই ভেবে উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। এই উদ্বিগ্নতাবোধ আপনার বর্তমান কাজকে ব্যহত করছে। মনে হচ্ছে আপনি নেতিবাচক চিন্তা, নেতিবাচক অনুভুতি এবং নিজের প্রতি নিজের নেতিবাচক আচরণের একটি চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছেন, বের হতে পারছেন না!
এক্ষেত্রেও কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে। যেমন,
ক) ছোটবেলায় আপনার প্রতি বাবা-মা বা শিক্ষকদের আচরণ কেমন ছিল? কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে বা কোন কাজে ভুল করলে আপনার প্রতি তাঁদের আচরণ কেমন হতো?
খ) আপনার আশেপাশের মানুষেরা আপনাকে আপনার ভালগুণের জন্য বা কোন অর্জনের জন্য প্রশংসা করত কিনা? বর্তমানেও করে কিনা?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন, কেননা, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যক্তি যখন তার অর্জনের বা গুণের জন্য যথাযথ প্রশংসিত হয় না এবং সামান্য ভুলের জন্য অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়, তখন তার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে। সে নিজেকে ছোট মনে করতে শেখে।
অতীতে এমন কিছু ঘটে থাকলে, তা পরিবর্তন করা আপনার হাতে নেই। তবে বর্তমানে আপনি নিজের ছোট ছোট গুণ খুঁজে বের করে তার জন্য নিজেই নিজেকে প্রশংসা করতে পারেন। নিজেকে প্রশংসা করুন নিজের ছোট-বড় যেকোনো অর্জনের জন্য, অভিব্যক্তির জন্য। নিজেকে প্রশংসা করা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠার প্রথম এবং শক্তিশালী উপায়। কোন কাজে ভুল হলে প্রথমে নিজেকে ক্ষমা করুন। নিজেকে অক্ষম বা নগণ্য ভাবার পরিবর্তে ভবিষ্যতে কি করলে এই ভুল এড়িয়ে চলা যায় সেটা নিয়ে ভাবুন।
সর্বোপরি নিজেকে গ্রহন করুন এই ভেবে যে, ‘I am OK as I am’ অর্থাৎ আমি যেমন তেমনভাবেই ভাল আছি। এর মানে হচ্ছে আপনার গুণ এবং দোষ সবকিছুই আপনার এবং সেটাকে নির্দ্বিধায় আপনি গ্রহণ করছেন। তাহলেই নিজেকে ভালবাসা হয়, সম্মান করা হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, নেতিবাচক বলয় থেকে নিজেকে বের করে এনে জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য মন বা চিন্তা বর্তমানে থাকাটা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে পারেন। অতীতের গ্লানি এবং ভবিষ্যতের আতংক আপনার বর্তমান সময়কে নষ্ট করছে তা আপনি খুব ভালো করে বুঝতে পারছেন। প্রকৃতপক্ষে, অতীতকে পরিবর্তন সম্ভব নয় আর ভবিষ্যতটা সবসময়ই অজানা। কিন্তু বর্তমানটা আপনার হাতের মুঠোয়। তাই বর্তমানে থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করুন আপনার সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য। আপনার জন্য শুভ কামনা।
ইরফানা সামিয়া
আমি একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী এবং সাইকোথেরাপিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান-এ স্নাতক, পেশাগত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং এম ফিল সম্পন্ন করেছি। তাছাড়া ভারত থেকে কাউন্সেলিং বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছি। দীর্ঘ ১৩ বছর কাউন্সেলিং পেশার সাথে যুক্ত আছি। বর্তমানে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সিনিয়র কাউন্সেলর হিসাবে কাজ করছি।