ধন্যবাদ আপনাকে, আপনি আপনার মানসিক অবস্থা সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলেছেন। আপনার লেখা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আপনার ছয় বছরের সম্পর্কের যে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা তা এখনও আপনাকে ভোগাচ্ছে। সেই সম্পর্কে আপনি যথার্থ ভালোবাসা কিংবা সম্মান পাননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি সম্পর্ক চালিয়ে নিয়েছেন, আবার আপনি সুখীও ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক অবস্থা ছিল সকল কিছুতেই মেনে নেয়া শিশুর মতো (Adapted Child)। ছোট বাচ্চারা অনেক সময় মায়ের বকার ভয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কাজ করে যেমন অনেকে দুধ খেতে চায় না কিন্তু বাবামার ভয়ে খেয়ে নেয়- আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে এই সম্পর্কটি আপনার জন্য একটি মানসিক কষ্টের বিষয় ছিল। ভালো বিষয় হচ্ছে, দেরিতে হলেও আপনি সেই ক্ষতিকর সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পেরেছেন।
তবে ক্ষতিকর সম্পর্ক থেকে নিজেকে এই সরিয়ে আনাটা হয়তো পুরোপুরি হয় নি। এর মধ্যে আপনি সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করেছেন। এখন আপনার স্বামীর সাথে বোঝাপড়ার যে সমস্যা হচ্ছে তার জন্য আপনার অতীতের সম্পর্ক থেকে পুরোপুরি বের না হয়ে আসতে পারা কিছুটা দায়ি হতে পারে। পীড়াদায়ক সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে আসাটা খুব সহজ কাজ না। এর জন্য নিজের সাথে নিজে অনেক কাজ করতে হয়, দেন-দরবার করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন কাউন্সেলিং বা এডুকেশনাল বা ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে পারেন। একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানী আপনাকে পীড়াদায়ক আবেগ যেমন, ক্ষোভ, ঘৃণা, অপমানবোধ, প্রতিশোধের তীব্র বাসনা ইত্যাদি মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারেন যেটা বর্তমানে স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও ভূমিকা রাখবে।
নিজের মেজার মর্জি আচরণ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বেশ ভালো। যেহেতু আপনি একজন ধীরস্থির এবং মনোযোগী মানুষ ছিলেন, সেহেতু এখনও সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন। আপনি বলেছেন, সামান্য কিছু বিষয় আপনাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। সেই সামান্য বিষয়গুলোকে আরো বস্তুনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করলে হয়ত দেখা যাবে, সেগুলো আসলে সামান্যতম বিষয়। আপনার ভালো থাকার জন্য এখন যা আছে, তার তুলনায় সেগুলো অনেক তুচ্ছ বলে বিবেচিত হতে পারে। নিজের সাথে একান্ত সময় দিয়ে ভাবুন। এছাড়া আপনি এখন মাস্টার্স করছেন। লেখাপড়া শেষ করে কী করতে চান, সেগুলো নিয়েও তো প্রস্তুতি দরকার, তাই না? সম্পর্ক জীবনের অন্যতম উপাদান, কিন্তু একমাত্র উপাদান নয়। জীবনকে যাপন করার জন্য আরো অনেক কিছুই প্রয়োজন হয়।
সাধারণভাবে মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু কাজ করতে পারেন-
- যখন লক্ষ্য করবেন আপনি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গেছেন, অনেক কষ্ট পাচ্ছেন , রাগবোধ হচ্ছে, মন খারাপ লাগছে, তখন সচেতনভাবে আপনার কষ্টে থাকা মনটিকে বলবেন, তুমি একা নও, তুমি অসহায় বোধ করো না, আমি তোমার পাশে আছি, আমার মনে তোমার জন্য অনেক ভালোবাসা আছে, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, গুরুত্ব দেই, মূল্যায়ন করি।
- প্রতিদিন সকাল নয়টার আগে এবং বিকাল তিনটার পরে ১০-১৫ মিনিট রোদে বসুন। সময় থাকলে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রোদে বসতে পারেন। সুর্যের আলো শরীরে মন ভালো করার হরমোন (Serotonin) নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট কায়িক পরিশ্রম যেমন হাঁটাচলা করতে পারেন। যদি আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে কায়িক পরিশ্রমের ব্যাপার থাকে, তাহলে আলাদা করে তা করার দরকার নেই।
- স্বামীর সাথে নিজের আবেগগুলো ছোট, ছোট করে বলতে পারেন।
- মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ, জিজ্ঞাসা, হতাশা, জীবনবোধ ইত্যাদি নানা বিষয় লিখতে পারেন। মনের যত্নে লেখা দারুণ কার্যকরি একটি উপায়।
আপনার জন্য শুভকামনা।