“ট্রানজিশনাল অবজেক্ট” সাধারণত শিশুর বেড়ে ওঠার সময়ে ব্যবহৃত কিছু বস্তুকে বোঝায়, যা আঁকড়ে ধরে শিশু অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানসিক স্বস্তি লাভ করে থাকে। ট্রানজিশনাল অবজেক্ট হলো একটি আরামদায়ক বস্তু যা শিশুরা নিজেদের কাছে রাখে যেকোনো উদ্বেগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসাবে, বিশেষ করে রাতে বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার সময়। পাতলা চাদর, কম্বল, মায়ের ওড়না, শাড়ির টুকরা, ছোট বল, টেডি বিয়ার ইত্যাদি হলো ট্রানজিশনাল অবজেক্ট। ডোনাল্ড উইনিকট সর্বপ্রথম ১৯৫১ সালে ট্রানজিশনাল অবজেক্টের ধারণা প্রবর্তন করেন ।
জন্মের পরে শিশু তার সকল চাহিদা পূরণের জন্য মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে। মায়ের মাধ্যমে সে বাইরের জগৎ সম্পর্কে বুঝতে শিখে। শিশু নিজেকে মায়ের শরীর থেকে আলাদা ভাবতে পারে না, মা এবং নিজেকে একটি অভিন্ন সত্তা মনে করে। শিশুর বয়স যখন ৫-৬ মাস হয়, তখন শিশুটি বুঝতে শেখে যে মা একটি পৃথক সত্তা এবং মা সবসময় তার কাছে থাকতে পারে না। মা একটু চোখের আড়াল হলেই শিশু মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয় পায়। এই উপলব্ধি শিশুর মাঝে হতাশা এবং উদ্বেগ তৈরি করে। এমন একটি উপলব্ধি শিশুর জন্য কিছুটা বেদনাদায়ক, তবে শেষ পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে গঠনমূলক প্রভাব ফেলে। শিশুর এই ট্রানজিশন প্রক্রিয়াতে একটি ‘ট্রানজিশনাল অবজেক্ট’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্রানজিশনাল অবজেক্ট শিশুকে মায়ের সাথে একটি কল্পনাপ্রসূত বন্ধন রাখতে সাহায্য করে। শিশু বুঝতে শিখে যে সে নিজেও তার যা প্রয়োজন তা মেটাতে সক্ষম। শিশু একা খেলার মাধ্যমে নিজে নিজে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ঘুমোতে যাওয়ার সময় শিশু ট্রানজিশনাল অবজেক্ট জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে। বিকাশের পরবর্তী পর্যায়ে শিশুর আর ট্রানজিশনাল অবজেক্টের প্রয়োজন পরে না।
ট্রানজিশনাল অবজেক্টের সাথে শিশুর সংযুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু অন্তত একটি ট্রানজিশনাল অবজেক্টের সাথে সংযুক্ত। তবে যেসব সমাজে শিশু তার বেশিরভাগ সময় মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করতে পারে সেসব ক্ষেত্রে শিশুদের ট্রানজিশনাল অবজেক্টের সংযুক্তি কম হয়ে থাকে।
মাতাপিতারা প্রায়শই চিন্তিত হন এই ভেবে যে তাদের সন্তান ট্রানজিশনাল অবজেক্ট আজীবন আগলে রাখবে কিনা। এমনটা খুব কমই হয়ে থাকে। একটি শিশুর নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এটা একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক উপায়। পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে সে ধীরে ধীরে ট্রানজিশনাল অবজেক্ট ছেড়ে দেবে এবং মানসিক চাপ মোকাবেলার অন্যান্য উপায় খুঁজে পাবে।
মোস্তাক আহমেদ ইমরান
অ্যাসিস্ট্যান্ট এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট এন্ড প্লে থেরাপিস্ট,
সদস্য, বিট্রিশ এসোসিয়েশান অফ প্লে থেরাপিস্ট (বেপ্ট)
সাইকোলজিক্যাল সার্ভিস সেন্টার
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
1 thought on “শিশুর বিকাশে “ট্রানজিশনাল অবজেক্ট””
Farhana Irin
(ডিসেম্বর 21, 2019 - 9:19 পূর্বাহ্ন)Nice program