আমার স্বামীর

আমার স্বামীর সাথে অনেক মেয়ে চেটিং করে

আমার বিয়ের বয়স চার বছর। আমার হাসবেন্ড একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত। তিন বছর প্রেম করে বিয়ে। প্রেম করার সময় জানতে পারি, তার সাথে অন্য এক মেয়ের ৬ বছরের সম্পর্ক আছে, কাবিনও হয়ে গেছে। শুধু অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসবে। আমাকে সে নিজেই জানায়। আমি সম্পর্ক ছিন্ন করি। পরবর্তীতে সে কান্না করে, অনেক দিন ধরে আমাকে কল করে। ঐ মেয়েকে ডিভোর্স দিবে, ঐ মেয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করে, ভালো না ইত্যাদি অনেক কিছুই আমাকে বলে। পরবর্তীতে সেই মেয়ে তাকে ডিভোর্স দেয়। এরপর সে আমার পরিবারকে রাজি করিয়ে আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর ভালই ছিলাম। আসতে আসতে খেয়াল করলাম, আমার স্বামীর সাথে অনেক মেয়ে চেটিং করে। সেক্সুয়াল কথাবার্তা বলে। আমি তাকে এইসব করতে না করি। সে বলে আর করবে না। এই চার বছরে সে অনেকবার এমন করেছে। চেটিং করে মেয়েদের সাথে দেখা করতে চায়। আমাকে সেই জন্য তার ফোন ধরতে দেয় না। আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায় না, বাচ্চাকেও সময় দেয় না। বাসায় আসলে ফোন নিয়ে বসে থাকে। কয়েকদিন ধরে দেখছি, একটা মাস্যাজ সেন্টারে কথা বলছে। নতুন মাস্যাজ আছে কিনা। মেয়েদের ছবিও দেখছে মাস্যাজ নেয়ার জন্য।

সে আমাকে অনেক কথা শোনায়, আমি কোনো উপার্জন করিনা তাই। আমার বাচ্চার স্পিচ ডিলে, যার কারণে আমি জব করতে পারছিনা। আমি আইন বিষয়ে স্নাতক করেছি, কয়েকদিনের মধ্যে আইনজীবী হবো, আইনজীবী পেশার পরীক্ষায় পাশ করেছি। আমার এখন কী করা উচিৎ, হাসবেন্ডকে ডিভোর্স দেয়া নাকি এডজাস্ট করে চলা?

আমাদের পরামর্শ

বাহ্ এতকিছুর মাঝেও আপনি আপনার লেখাপড়া শেষ করেছেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই আপনি একজন আইনবিদ হিসেবে কাজও শুরু করবেন! চমৎকার! আপনি যে একজন অত্যন্ত অধ্যবসায় সম্পন্ন মানুষ, এটা তাই প্রতিফলন করছে। এটা আপনার চরিত্রের একটা অন্যতম শক্তিশালী দিক।

আপনার স্বামীর বেশকিছু অভ্যাসের কথা লিখেছেন যেগুলো স্বাভাবিক আচরণের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, বলা যায় অস্বাস্থ্যকর। বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে আপনি অনেক অসহায়বোধ করছেন। আপনার স্বামীর এই আচরণ আসক্তির পর্যায়ে পৌছেছে কিনা তা একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে মূল্যায়ন করানো দরকার। মূল্যায়নে যাই আসুক না কেন, আপনি যে ভীষণ কষ্টে আছেন এবং চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন, তা আপনার লেখা থেকে বোঝা যাচ্ছে। আপনার স্বামীর এরকম আচরণের জন্য যেমন আপনি দায়ি নন, তেমনি তার আচরণ পরিবর্তন করার ক্ষমতাও হয়ত আপনার হাতে নেই। আপনি তার সাথে সম্পর্কের ইতি টানার সম্ভাব্যতা জানতে চাচ্ছেন।

খোলাখুলিভাবে বললে, বিয়ে এমন একটি সামাজিক বন্ধন যেখানে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একে অন্যের মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ করে থাকে। একজন সঙ্গী যখন অপরসঙ্গীর এসব চাহিদার বিষয়ে আন্তরিক হয়, মনোযোগী হয়, পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া ততই মজবুত হয়। আপনাদের ক্ষেত্রে এগুলো কতটা পূরণ হচ্ছে একটু ভেবে দেখবেন। এসব চাহিদা দীর্ঘদিন অপূর্ণ থাকলে সম্পর্কে এমনিতেই প্রাণ থাকে না।     

ক্যারিয়ার আর সন্তান নিয়ে হয়ত এখন আপনি বেশি মনোযোগ দিতে চাচ্ছেন। নিজের একটা আইডেন্টিটি তৈরি করতে চাচ্ছেন, যার শুরুটা (আইন পরীক্ষায় পাশ করার মাধ্যমে) ভালো হয়েছে। ধীরে ধীরে আপনি আপনার নিজেকে নিয়ে আরো ভালো আর স্বস্তি বোধ করবেন, যা আপনাকে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এছাড়া, সামাজিক সহায়তা যেমন, আপনার বা স্বামীর পরিবারের অভিভাবকদের সাহায্য নেয়ার কথাও ভাবতে পারেন।

আপনার জন্য শুভকামনা।

নুজহাত রহমান
+ posts

কাউন্সেলর

সাইকোলজিক্যাল সার্ভিসেস

এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Post Author: নুজহাত রহমান

কাউন্সেলর সাইকোলজিক্যাল সার্ভিসেস এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।