মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ

আপনি কি মানসিক অসুস্থতার দিকে যাচ্ছেন?

শরীর আর মনের বিকাশ একইভাবে হয় না। পর্যাপ্ত খাবার পেলে শরীর বেড়ে উঠে। মনকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ‘মনের খাবার’ দিলে তার সঠিক বিকাশ হয়। অনেকেই আমরা মনের যথাযথ খাবার সরবরাহ করি না অথবা করতে পারি না। অনেকে আবার জানিও না যে মনেরও যত্নের (তথা খাবার) প্রয়োজন আছে।

এভাবে দীর্ঘদিন অবহেলার ফলে আমাদের মনে সৃষ্টি হতে পারে ক্ষত যা আবেগ ও আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আজকে এরকম দশটি মানসিক বা আবেগিয় সমস্যার লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব।  

[আরো পড়ুনঃ কোথায় পাবেন বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা]

একটু সময় দিন নিজেকে।  মিলিয়ে দেখুন নিচের উপসর্গগুলোর কোনটি আপনার মাঝে আছে কি-না।

১। আপনি সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ

রাস্তা দিয়ে হাটছেন, মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটবে। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়েছেন, চিন্তা করছেন বাচ্চা সুস্থভাবে ফিরে আসবে তো? সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। দৈনন্দিন কাজে আপনি মনোযোগ দিতে পারছেন না।

২। সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে আক্ষেপ করেন

বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন অতীতে ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে পুনর্জীবিত করার মধ্য দিয়ে কিংবা ভবিষ্যতে আপনার জীবনে কী ঘটতে পারে সেই ভাবনায়।

৩। সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে রাগান্বিত থাকেন

তরকারিতে লবণ কম হয়েছে, তো আপনি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উঠে যাচ্ছেন খাবার টেবিল থেকে। লিফটের সামনে লম্বা লাইন দেখে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়ছেন। এমন ছোট বড় অসংখ্য কারণে আপনি প্রায় প্রায় রেগে যাচ্ছেন।

৪। ‘তালগাছ আমার’ সবসময় এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলেন

আপনি যা দেখেন, শোনেন বা বোঝেন তাই কেবল ঠিক, অন্য সবাই ভুল। অন্যরা যা বলছে তার কোন মুল্য বা মর্যাদা আপনার কাছে নেই।

৫। অন্যদের জন্য আপনার ভেতরে কোন সহানুভূতি নেই

অন্য কারো কষ্ট আপনাকে স্পর্শ করে না। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত আপনি। অন্য কারো জায়গায় নিজেকে রেখে তার কষ্ট অনুধাবন করেন না বা করার চেষ্টা করেন না। ফলে আপনার সম্পর্কগুলোতে ফাটল দেখা দিচ্ছে। অথচ সেজন্য আপনি অন্যকেই দায়ী করে যাচ্ছেন।     

৬। সামান্য ব্যাপারেই আঘাত বা কষ্ট পান

জন্মদিনে বন্ধু শুভেচ্ছা জানায়নি, সুতরাং সে পাষাণ-প্রান, স্বার্থপর। এমন পাষাণ-প্রান, স্বার্থপর বন্ধুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ। কারো সাধারণ একটা রসিকতার ভেতর আপনি অপমানের গন্ধ পাচ্ছেন এবং ক্ষোভে-দুঃখে দুমড়ে মুচরে যাচ্ছেন।   

৭।  সম্পর্কগুলোর সীমারেখা নির্ধারণ করতে পারেন না

আপনার বাড়িওয়ালা আপনাকে দিয়ে প্রতিদিন  বাজার করাচ্ছেন অথচ আপনি তাকে না করতে পারছেন না। কারণ আপনি বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার সম্পর্কের সীমারেখা নির্ধারণ না করে তার সাথে অতি আবেগীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। কিংবা নতুন আলাপ হওয়া সহকর্মীর সাথে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে আলোচনা করছেন।     

৮। ভিন্ন মতের মানুষদের একেবারেই সহ্য করতে পারছেন না, শাস্তি দিতে চান

ধর্মীয় বা রাজনৈতিকভাবে যারা আপনার সাথে একমত নয় তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবেন।  

৯। জীবনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন

জীবনটা আপনার কাছে পাগলা ঘোড়ার মতো মনে হয়, যার লাগাম আপনার হাতে নেই। আপনি যা করতে চান তা করতে পারেন না এবং অধিকাংশ সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন।

১০। নিজেকে আপনার অতি নগন্য এবং অপদার্থ মনে হয়

আপনার ধারণা আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এই পৃথিবীতে আপনার কোন মুল্য নেই।  

উপরের দশটি লক্ষনের একটিও যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে আর দেরি না করে পরিবর্তনের পথে পা বাড়ান। প্রথমে নিজেই চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং সেবা নিন। আসন্ন মানসিক রোগকে প্রতিরোধ করুন।   

রাউফুন নাহার
+ posts

রাউফুন নাহার মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে এবং অনার্স করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। বর্তমানে এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভালোবাসেন মানুষ, প্রকৃতি আর তাদের ভেতরের অন্তর্নিহিত সুরকে।

Post Author: রাউফুন নাহার

রাউফুন নাহার মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে এবং অনার্স করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। বর্তমানে এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভালোবাসেন মানুষ, প্রকৃতি আর তাদের ভেতরের অন্তর্নিহিত সুরকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।