তুমিঃ “ওর চোখ দুটো খুব ছোট ছোট, কিন্তু সাঙ্ঘাতিক রকমের গভীর।” “বাদামী রঙা- যেন কিছু বলতে চায়। আচ্ছা, ওর চোখ যে কালো নয়, বাদামী, তুমি সেটা আগে জানতে?”
সেঃ “বিলক্ষণ জানতাম । তবে এটা জানতাম না যে, যার চোখ সেই জানে না, তার চোখদুটো কি সুন্দর! যে চোখ দুনিয়ার তাবৎ অপার্থিব এবং অর্থহীন জিনিসে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায়, সেই চোখজোড়াই কিনা অপ্রয়োজনীয় সৌন্দর্য বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কি সেলুকাস! বাহক রাখে না ধারকের খবর! একটা মানুষ এতটা উদাসীন হয় কি করে?”
আমিঃ “আমি আসলেই খেয়াল করিনি। খেয়াল করার পরে যথেষ্ট অবাক হয়েছি। বিশ্বাস হচ্ছিল না।”
সেঃ “খেয়াল না করার মত এতটা খেয়ালী হতে পার কিভাবে ?”
তুমিঃ “তুমি কি ওকে নার্সিসিস্ট হতে বলছ ?” “সবকিছু বাদ দিয়ে ও নিজের সাথে প্রেম করবে? তবে আমার ধারণা, সে-এটাও করতে পারবে না । পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে এ ব্যাপারে ওকে অবিশ্বাস করা যায়।” “তবে একটা ব্যাপার কি জানো, নিজের সম্পর্কে যতটাই মনোযোগী হও না কেন, অন্ধকার থেকে সবকিছুকে আলোতে নিয়ে আসতে পারবে না। কিছু জিনিস বাদ পড়েই যায়। ওর’ও হয়তো এই বিষয়টা বাদ পড়ে গিয়েছিল।”
সেঃ “অবশ্যই তাকে নার্সিসিস্ট হতে বলছি না। নিজের সম্পর্কে সচেতনতার মানে নার্সিসিজম নয়। তুমি যদি নিজেকেই না জান, তবে জগতকে জানবে কি করে? সীমাবদ্ধতার কথাটা মাথায় রাখতে হবে বৈকি। কিন্তু চেষ্টা, উদ্যম থাকলে কি না জয় করা যায়, বল? আমাদের দেহটা শুধু দেহই তো নয়-একটা দরজাও, জগতকে জানতে পারার দরজা।’
তুমিঃ “এটা ঠিক বলেছ । Know Thyself– সক্রেটিস কত আগেই সেটা উপলব্ধি করে গেছেন।”
সেঃ “নিজেকে খোঁজ।” “ভাবনাযন্ত্রের নিচে ফেলে নিজেকে ব্যবচ্ছেদ কর। তোমার সবল ও দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের কর। তারপর পৃথিবীর পথে বের হও …”
আমিঃ “কিন্তু আমার যে অনেক পিছুটান গজিয়ে গেছে !”
সেঃ “নির্বোধ!” “পিছুটান কার নেই? যার কিছুই নেই, তারও একটা পিছুটান আছে। কিছু না থাকাই তার পিছুটান। কেউ এই টান উপড়ে ফেলে, কেউ সাথে নিয়ে এগোয়। তুমিই সিদ্ধান্ত নাও-কি করবে, কিভাবে করবে।”
তুমিঃ “খাসা একটা কথা বলেছ, মাইরি! “যার কিছুই নেই,তারও পিছুটান আছে” আমার ধারণা মানুষ জন্মেছেই মায়া ছাড়ানোর জন্য । মানুষের মানসিকতায় যতদিন মায়া থাকবে, ততদিন তাঁদের পিছুটানও থাকবে।”
আমিঃ “তোমরা কি আমার সাথে থাকবে? আমার ভয় ভয় করে, পাছে একলা হয়ে যাই। আজকাল অল্পকিছুতেই মন ও শরীরের ঘাম বের হয়ে যায়!”
তুমি+সেঃ “নির্বোধ, ওরে! আমরাতো তোমারই অংশ। (বাদামী) চোখদুটো বন্ধ কর, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকাটাকে অনুভব করলেই তুমি আমাদের খুঁজে পাবে। আমরা তোমারই সত্তার অংশ। কোত্থাও যাব না, তোমাকে ছেড়ে। কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে, তুমিও আমাদের ছেড়ে যাবে না।”
আমিঃ “যাব না। এই বাদামী চোখজোড়া দিয়েই তোমরা আর সব রঙ দেখবে। আমি তোমাদের কাছেই থাকবো। তোমরাও থেকো।”
সে+তুমি+আমিঃ হা হা হা…
আমরা, যারা ওঁদের অংশ নই, একটা মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছি। বোধ হয়, একত্রীকরণের হাসি, মিলনের হাসি। ওঁদের হাসি অটুট থাকুক, আমরা শুভ কামনা জানাই।
ওমর ফারুক
ট্রেইনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন । মানুষের কথা শুনতে ভালোবাসেন । মানসিকতার বৈচিত্র্যতায় অবাক হন । মানুষিক বৈচিত্রতায় শব্দ এবং অনুভূতির রঙ চড়াতে পছন্দ করেন। অজানা,অজ্ঞাত, অরূপ বিষয় যা এখনো রহস্য হয়ে আছে সেখানে যুক্তির,মানবিকতার আলো ছড়ানোর প্রয়াসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।