শারীরিক উপায়
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত ঘুম আর কায়িক পরিশ্রম- এই তিনটি বিষয়কে শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অতিব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। খেয়াল রাখবেন যেন, আপনি আপনার স্বাভাবিক খাদ্যাভাস অব্যাহত রেখেছেন, পরিমাণমতো ঘুমোচ্ছেন আর দৈনন্দিন কিছু না কিছু কায়িক পরিশ্রম করছেন। শারীরিক বিভিন্ন ব্যয়াম করাও খুব কার্যকরি, বিশেষকরে এই সময়ে।
মানসিক উপায়
যৌক্তিক চিন্তা
এই সময়ে মানসিক স্থিরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ধীরস্থির চিন্তা করতে পারেন, তবে ভুল কম হবে, ফলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। আর এই মানসিক স্থিরতা আসে যদি আপনি যৌক্তিক চিন্তা করতে পারেন অর্থাৎ আশেপাশের এবং আপনার নিজের বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করতে পারেন। এতে আপনার উদ্বেগ কমে যাবে।
এই সময়ে অনেক মানুষের হয়ত খাদ্যসংকট চলছে, আপনি একাই সেটা সমাধান করতে পারবেন না। অথবা, মানুষজন নির্দেশ অমান্য করে রাস্তায় বের হচ্ছে, আপনি লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া করতে বেরিয়ে গেলেন। এরকমটা আসলে মানসিক অস্থিরতায় প্রকাশ করে। আমরা যে সমাজ পরিকাঠামোর মধ্যে আছি, সেই বাস্তবতা বিবেচনা করেই নিজের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখাটাই আসল কথা। এতে যেটুকু হবে, যেভাবে হবে, সেটাই আসলে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড, তাই নয় কি?
এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম বুঝেশুনে ব্যবহার করাও মানসিক স্থিরতার মধ্যে পরে। গায়েবি, আজগুবি এবং অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা বা কার্যকারণ বিশ্বাস করা এবং ভালোভাবে যাচাই না করে শেয়ার করাও কিন্তু মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ করে।
আপনার অনেক অসুবিধা বা সমস্যা হয়তো আছে কিন্তু তারপরেও আপনার যা আছে, যা এখনো উপভোগ করতে পারছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। ঈর্ষা, বিদ্বেষ ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলুন।
মনোযোগিতা
প্রতিনিয়িত মৃত্যু আর সংক্রমনের সংখ্যা শুনতে শুনতে আমাদের মন অস্থির হয়ে যায়, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। এই উদ্বিগ্নতা কমাতে মাইন্ডফুলনেস বা মনোযোগী মনের চর্চা করা খুব কার্যকরী। আপনার মন যখন বর্তমানে থাকছে, সেটাই মনোযোগী মন। খেয়াল করুণ, আশপাশের ছোটখাটো বিষয়গুলো, সেগুলো থেকেও আনন্দ নিতে শিখুন । সেটি জানালা দিয়ে গাছে একটি পাখি দেখেই হোক বা আপনার বাচ্চার কোন কথা শুনেই হোক।
আপনি যত মনোযোগী হবেন, ততই আনন্দ অনুভব করবেন। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । প্রতিদিন হাসুন। হাসি, সুখানুভূতি আপনাকে দীর্ঘায়ু করতে ভূমিকা রাখে।
গভীর জীবনবোধ
মনকে স্থির, মনোযোগী করতে হলে, উপরের চর্চাগুলো করার পাশাপাশি কিছু গভীর জীবনবোধের অনুধাবন জরুরি। প্রচলিত ‘আমি, আমি’ বা ‘আমাকেই সেরা হতে হবে, আমাকেই সব পেতে হবে’-এই জীবনবোধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখবেন, খুববেশি উঁচুনিচু বা বৈষম্য কোথাও বেশিদিন স্থায়ী হয় না। হোক সেটা মানব সমাজে বা প্রকৃতিতে। তাই, নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অন্যকে সাধ্যমত সাহায্য করা, ভালোবাসার প্রকাশ করা, অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া- এসব গুণাবলীর চর্চা করতে হবে।
ভবিষ্যৎ অজানা, অদেখা কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সঠিক পদক্ষেপ আমাদেরকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। প্রশান্ত মনই পারে আমাদেরকে সেদিকে নিয়ে যেতে।
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।