হাতি নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটা সত্য না মিথ্যা সেটা জানি না, তবে গল্পের মধ্যে খুঁজে পাওয়ার মত অনেক কিছু আছে। হাতির কান কুলার মত। চোখের পেছনে কুলার মত কান থাকায় হাতি তার নিজের শরীর দেখতে পায় না। ফলে হাতি জানে না, তার শরীর কত বিশাল! হাতি যদি একবারও বুঝতে পারত, সে দেখতে এত্ত বিশাল, সবকিছু নাকি ওলট পালট করে দিত!
মানুষের কান বা শরীর কোনটাই হাতির মত বড় না। ফলে সাধারণত মানুষ, ওলটপালট করে দেবার চিন্তা করে না। অধিকাংশ মানুষ চোখের সীমানায় যা দেখে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
[আরো পড়ুনঃ কোন প্রফেশনকেই মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।]
সত্য কথা হল, হাতির মত শরীর না থাকলেও উন্নত মস্তিস্কের কারণে মানুষের ক্ষমতা সীমাহীন। যারা সেই ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, তারা আসলেই ওলটপালট করে দিতে পারে। যারা সেই ক্ষমতা বুঝতে পারে না, তারা চুপচাপ থাকে। অন্যের ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে বলে, আরে বাহ! কি চমৎকার ব্যাপার! মানুষ কিনা করতে পারে?
এরা অন্যকে দোষারোপ করে, সিস্টেমকে গালিগালাজ করে, মানুষের ভুল ধরে, সরকারের ভুল ধরে, রাজনীতির ভুল ধরে। নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিশালাকার হাতিটাকে অদৃশ্য এবং অবাস্তব কান দিয়ে ঠেকে রাখে। ফলে ছোট শরীর নিয়ে ছোট হয়েই থাকে। এই তো।
সফলতার জন্য বিশেষ কোন দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ন, গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার লাগে না। ফেসবুকের মত আরো যা কিছু আবিষ্কার, উদ্বাবন দেখে আমরা অবাক হই, তা সব মানুষই করেছে। তাদের জীবিত অবস্থায় করেছে। এর জন্য প্রয়োজন নিজের ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। অধিকাংশ মানুষ সেই লুকায়িত শক্তিকে দেখতে পায় না। যারা সেটা পারে তারা হয় উদ্বাবক, নেতা আর বাকীরা হয় ফ্যান বা ফলোয়ার।
ব্যর্থ হবার ভয়, লজ্জা, পরিবার ও সমাজ থেকে আসা আরো কিছু ভাইরাস মিলেমিশে এমন সব বড় বড় ‘কান’ তৈরি করে, যাতে নিজের ভিতরের অসীম শক্তি একেবারে ঢাকা পড়ে যায়। বিজ্ঞাপনে শুধু শুনেই চলি ‘জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে’, কিন্তু শক্তির দেখা পাই না। দেখি শুধু অন্ধকার!
আপনার নিজের ক্ষমতা নিয়ে কী আপনি সন্দিহান? পারব না, আমার দ্বারা হবে না, এসব আমার কাজ না, ইত্যাদি কথা কী অবচেতন থেকে আপনার চিন্তায় বারবার চলে আসে? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তবে আপনাকেও সেও ভিত্তিহীন, কৃতিমভাবে সৃষ্টি করা বিশালাকায় ‘কান’ ঢেকে ফেলেছে। এই কান আপনার আত্মশক্তিকে উপলব্ধি করতে দিচ্ছে না। আপনি হয়ে যাচ্ছেন ভীত, হতাশাগ্রস্থ।
আপনাকে বলছি, ছিড়ে ফেলুন সেই মিথ্যা, অদৃশ্য ‘কান’। উপলব্ধি করুণ আপনার ভিতরের বিশালাকায় হাতিটাকে।
আজহারুল ইসলাম
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট।
সহযোগী অধ্যাপক, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত বই