আজহারুল ইসলাম

সুবর্ণ এক্সপ্রেস (পর্ব ১)- আজহারুল ইসলাম

আজিম সাহেব সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে বসে আছেন। চট্টগ্রাম যাবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। চার দিনের সফর। আজিম সাহেব সময়মতো ট্রেনে উঠেছেন। লোকজন এখনো উঠছে। হকার চা-বিস্কুট নিয়ে ডাকাডাকি করছে। ছোট বাচ্চারা আসছে পত্রিকা নিয়ে। কেউ আসছে জীবজন্তুর রঙিন ছবিসংবলিত শিশুদের বই নিয়ে। একজন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরেকজন হকার ঢুকছে। সুন্দর একটা ছন্দ। আজিম সাহেবের কামরায় একে একে যাত্রী এসে বসছে। কারও কারও লাগেজ রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। একেক জনের একেক রকম লাগেজ। দামি স্যুটকেস থেকে শুরু করে চটের বস্তাও দেখা যাচ্ছে। সবার চেহারায় বিরক্তি আর ধকলের ছাপ। বিরক্ত বোধ হওয়াটা স্বাভাবিক। অন্তত আজিম সাহেবের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। রেলস্টেশনে একটা হইহই ছোটাছুটি ভাব লেগেই থাকে। গল্প-উপন্যাসে বা সিনেমায় রেলস্টেশনকে যত নান্দনিকভাবে তুলে ধরে বাস্তব তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই যেমন আজকে ট্রেনের বগিতে উঠেই বিকট গুমট এক গন্ধ লাগল আজিম সাহেবের নাকে। এসি বগি, দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। আজিম সাহেব ধীরে ধীরে এগিয়ে তার সিটে গিয়ে দেখেন আরেক বিপত্তি। এক বৃদ্ধ তার সিটে বসে আছেন। এ কেমন কথা। আজিম সাহেব বললেন, ‘চাচামিয়া, আপনার সিট নম্বর কত? আপনি মনে হয় আমার সিটে বসেছেন?’ বৃদ্ধ টিকিট বের করে দিয়ে বলল, ‘আই ন জানি, বাজান। আর পুলায় বসায় দিয়া গেল।’ আজিম সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন, বৃদ্ধ লোকের টিকিটেও এই সিট নম্বর। মানে কী? এক সিট দুবার বিক্রি করেছে? এটা ‘মফিজ’ ট্রেন নাকি। ছাত্ররা সবাই বলল, সুবর্ণ এক্সপ্রেস বেস্ট। আজিম সাহেব রাগে বিড়বিড় করছেন। এখন তিনি কোথায় বসবেন। যে ছাত্ররা বলেছিল ‘বেস্ট’, তাদের সবাইকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা দরকার। মনে মনে বললেন, ‘সব ফাজিলের দল, কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক’। ঠিক তখনই রেলের একজন স্টাফ এসে বলল, ‘কোনো সমস্যা, স্যার?’

আপনি কি এই ট্রেনের?

দুজনকে এক সিট দিয়েছেন?

তাই নাকি? দেখি স্যার টিকিটটা। সে দুটো টিকিট নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে বলল, সত্যিই দুঃখিত, স্যার। এটা কম্পিউটারের ভুল হয়েছে। বৃদ্ধ মানুষ যেহেতু এখানে বসেছে, আপনাকে অন্য আরেকটা সিট দিচ্ছি। ঠিক আছে?

কোনো সমস্যা না হলেই হলো।

না না, আপনার টিকিট ঠিক করে নতুন সিট নম্বর দিচ্ছি। এই যে এখানে, মাঝখানে, এটা সবচেয়ে ভালো। সামনে টেবিল আছে। জানালার পাশে আপনার সিট। ঠিক আছে, স্যার?

কেউ এসে আবার উঠে যেতে বলবে না তো?

একেবারেই না। আমি আশপাশেই আছি। কোনো অসুবিধা নেই।

আজিম সাহেব রেলের স্টাফের কর্মতৎপরতা আর ব্যবহারে মুগ্ধ। আগের ধারণা ভুল হয়েছে। এ জন্য হুটহাট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক না। তিনি লজ্জিত বোধ করলেন। মনে মনে বললেন, ফাজিলের দল, কান ছেড়ে দিয়ে বসে পড়। আরাম করে বস।

মাঝের সিট বেশ আরাম লাগছে। সম্ভবত সামনে ফাঁকা জায়গার জন্য। বিকট গন্ধটাও আর পাওয়া যাচ্ছে না। গন্ধ কি চলে গেছে, নাকি আজিম সাহেবের নাক গন্ধের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। মানিয়ে নেওয়ার বেলায় মানুষ প্রাণী হিসেবে অসাধারণ। পাশের একটি আর সামনের দুটি সিট এখনো খালি। ১০ মিনিট সময় আছে। যাত্রী চলে আসবে নিশ্চয়। আজিম সাহেব ভাবছেন কেউ না এলেই ভালো। নিরিবিলি একাই ভ্রমণ করবেন। হাতে তিনটি বই আছে। শেষ করা যাবে। পরক্ষণেই নিজেই লজ্জাবোধ করলেন, কী রকম স্বার্থপর চিন্তা? চারজনের সিটে একাই যেতে চাচ্ছেন। এত মানুষের দেশে এ রকম আবদার শুধু অবান্তরই নয়, রীতিমতো দোষ। আজিম সাহেব মন থেকে এই চিন্তা সরাতে চাচ্ছেন। মানুষ আসুক, বসুক, ফোনে কথা বলুক। সবাই ভাগাভাগি করে বাঁচি। এতেই আনন্দ। ভাবতে ভাবতে হ্যান্ড লাগেজ হাতে এক তরুণী হাজির।

‘এটা কী ৩৬ নম্বর সিট?’

আজিম সাহেব পাশের সিটের নম্বর দেখে বললেন, হ্যাঁ।

মেয়েটি ধপাস করে বসল। হালকা এক বাতাস লাগল আজিম সাহেবের গায়ে। সঙ্গে পারফিউমের সুবাস। বয়স কত হবে, ২৭-২৮? পোশাক-আশাক মার্জিত। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে স্মার্ট। কিছুটা জিরিয়ে মেয়েটি বলল,

‘আর একটু লেট করলেই ট্রেন মিস করতাম। চিটাগাং যাচ্ছেন?

কী বলি, চিটাগাংয়ের ট্রেনে তো মানুষ চিটাগাং যাবে, রাজশাহী যাবে না।’

মেয়েটি একাই কথা বলে যাচ্ছে। বেশি কথা বলার স্বভাব মনে হয়। আজিম সাহেব কিছুটা শঙ্কিত বোধ করছেন, নিরিবিলি থাকতে চেয়েছিলেন। সেখানে যদি পাশে কেউ সারাক্ষণ কথা বলতে থাকে। সব সময় তো আর চুপচাপ থাকা যায় না। আজিম সাহেব কিছু বলার আগে, মেয়েটি বলল,

‘পরিচয় হওয়া ভালো, দূরের পথ। আমার নাম সাদিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স। জব করছি দুই বছর।’

বেশ ভালো। আমি…

মেয়েটি আজিম সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ওয়েট ওয়েট…আই থিংক আমি আপনাকে চিনি, আপনি ঢাবির ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাপ্লাইড সাইকোলজির শিক্ষক। নামটা ঠিক মনে আসছে না, কী আজমল জানি।’

বখতিয়ার আজিম।

‘রাইট, ড. বখতিয়ার আজিম। আপনি আমাদের হলে একবার গিয়েছিলেন, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ভালো হলো আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে। অনেকবার ভেবেছি আপনার সঙ্গে দেখা করব। এলিফ্যান্ট রোডে আপনার চেম্বার আছে না?’

আজিম সাহেব মাথা নাড়লেন। এই মেয়ে আজকে বেশ পোহাবে বোঝা যাচ্ছে। আজিম সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন, আগ বাড়িয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। শুধু হ্যাঁ-নার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। কথার পিঠে কথা না বললে কথা আগায় না। মেয়েটি পায়ের কাছে ব্যাগ গুছিয়ে নিল। হাতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ। মনে হচ্ছে খাবার আছে। দূরের জার্নিতে সঙ্গে খাবার রাখা ভালো। মেয়েটি একটি ফ্লাস্ক বের করল।

‘কফি খাবেন, স্যার? বানিয়ে দিই?’

না, ঠিক আছে। থ্যাংকু।

‘তেও লিমো পানাস দিব? ফ্লাস্কে গরম পানি আছে।’

তেও লিমো পানাস, সেটা আবার কী? অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করলেন আজিম সাহেব।

‘লেবু দিয়ে রং-চা। মালয়েশিয়ায় বলে তেও লিমো পানাস। আইস দিয়ে বানালে বলে তিও লিমো আইস। পানাস মানে জানেন?’

না।

‘পানাস মানে গরম।’

ও আচ্ছা। আজিম সাহেবের কোনো আগ্রহ নেই।

‘খালার মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম আছে। এ পর্যন্ত দুবার বেড়াতে গিয়েছি।’

আজিম সাহেব তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না।

‘স্যার, আপনি ভাবছেন এই মেয়ের মাথা খারাপ। বাচাল। আজকে অনেক ভোগাবে!’

আজিম সাহেব মেয়েটির দিকে তাকালেন, কিছু বললেন না।

মেয়েটি বলল, ‘যা ভাবছেন, তা এক শ ভাগ সত্য। আপনার সঙ্গে অনেক কথা বলব। রাগ করলেও আমার করার কিছু নেই। আমি চুপচাপ থাকতে পারি না।’

আজিম সাহেব হতাশ দৃষ্টিতে তাকালেন। সামনের সিট দুটোতে এখনো কেউ বসেনি। ট্রেন কি ছেড়েছে?

‘হ্যাঁ, পাঁচ মিনিট তো হবেই।’ মেয়েটি উত্তর দিল।

আজিম সাহেব আবার লজ্জিত বোধ করলেন। তিনি আনমনা হয়ে গিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে কী ঘটছে তার খেয়াল থাকছে না। এটা ভালো কোনো বিষয় নয়। তিনি কি অস্থির বোধ করছেন?

‘স্যার, আপনাকে দেখে খুব হতাশ মনে হচ্ছে। এত হতাশ হওয়ার কী আছে? সুন্দরী একটি মেয়ের পাশে বসে রেল যাত্রা। আশপাশে কেউ নেই। ডাবল বিনোদন! হি হি…’

আজিম সাহেব এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনি কী আমার ধৈর্য পরীক্ষা করছেন?

‘স্যার, আমাকে তুমি করে বলেন। ভার্সিটির শিক্ষকদের নামে তো প্রায় খবর আসে, ছাত্রীর সঙ্গে প্রণয়। হি হি…আমি তো এখন আর ছাত্রীও না। কী অসুবিধা? তা ছাড়া আপনি আমাকে বেশ ভালোভাবে খেয়াল করেছেন। বলেন, করেননি? বসার সময় পেছন থেকে আমার কামিজ উঠেছিল। হি হি… কীভাবে বুঝলাম জানেন?’

আজিম সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালেন।

‘আপনার চোখ দেখে। মেয়েরা ছেলেদের চোখ দেখে অনেক কিছুই ধরতে পারে।’

আজিম সাহেব জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছেন। এই মেয়ের হাত থেকে কীভাবে রেহায় পাওয়া যায় সেই চিন্তাই চলছে। মেয়েটিকে দেখে সে রকম ঘরানার কিছু মনে হচ্ছে না। ফ্রড টাইপ ছেলেমেয়েদের পোশাক-আশাকে একটা না একটা গলদ থাকে। দামি পোশাক পরলেও জুতা বেমানান, আবার মুখের মেকআপে দেখা যায় অপরিমিতি বোধ। এই মেয়েটির বেলায় কোনোটায় খাটছে না। আজিম সাহেব কিছুটা অসহায় বোধ করছেন। সঠিক কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না। তিনি সিট ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন। নিশ্চয় এত বড় ট্রেনে কোথাও একটা খালি সিট থাকবে। কিন্তু সিট বদলাতেও মন চাচ্ছে না। মেয়েটি কি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে? হিপনোটাইজড করেছে? আজিম সাহেবের ধারণা ঢাকার অনেক সেলসম্যানের হিপনোটাইজ করার ক্ষমতা আছে। তারা বলতে শুরু করলে আর কিছুই করার থাকে না। এ মেয়েটির এ রকম কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে।

মেয়েটি ইতিমধ্যে একবার কফি শেষ করেছে। আজিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, ‘স্যার, আপনার চেহারা দেখে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। হি হি…আপনি ভাবছেন খারাপ মেয়ের পাল্লায় পড়েছেন। ভুলিয়ে-ভালিয়ে খাতির জমাই, তারপর সুবিধামতো বিপদে ফেলে টাকা আদায়। এই যেমন, বলে উঠলাম আপনি আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন, ব্যস চিল্লাচিল্লি শুরু। আশপাশে আমারই ঠিক করা লোক থাকবে। তারা এসে বলবে, কী মিঞ্চা ভাই, দেখে তো ভদ্রলোক মনে হয়, কিন্তু কামকাজ তো খারাপ করেন। মেয়েছেলে পাশে পাইয়া চুলকায়। থাপড়ায়ে সব কটা দাঁত ফালামু হারামি কথাকার। এরপর মোবাইল, মানিব্যাগ যা আছে সব খালাস। পরের স্টেশনে আমিও খালাস, ওই লোকগুলোও খালাস।’

সাদিয়া, প্লিজ, থামো। তোমার কথায় মাথা ধরে গেছে। ৩০ মিনিট আর একটা কথাও বলবে না। এটা একধরনের চুক্তি। আর কী জানি আছে, লিমো পানাস নাকি, দাও এক কাপ। মাথা ভার হয়ে গেছে। আজিম সাহেব বুঝেছে মেয়েটি বিরক্তিকর হলেও ক্ষতিকর না।

সাদিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে ফ্লাস্ক থেকে গরম পানি, টি-ব্যাগ আর লেবু দিয়ে তেও লিমো পানাস বানাল। আজিম সাহেবকে দিয়ে বলল, ‘আমি জানি আপনি আমাকে সে রকম ভাবছেন না।’

আজিম সাহেব নীরব, চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন।

‘স্যার, আপনাকে এবার ডিটেইল পরিচয় দিই। একটি ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিয়ে, আমি সাদিয়া মাহবুদ, বাংলাদেশ সরকারের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, … তম বিসিএসে আমি সম্মিলিত মেধাতালিকায় …তম হয়েছি।’

আজিম সাহেব কার্ডটা নিলেন। পড়লেন, কিন্তু নির্বিকার থাকলেন। বিশ্বাস করলেন কি না, বোঝা গেল না। সাদিয়া এবার বলল, ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না তো। এত অসংলগ্ন কথা বলা একটি মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হয় কীভাবে? আপনার জন্য কিছু ডকুমেন্টস।’ সে ব্যাগ থেকে একটা পেপার কাটিং আর একটা স্যুভেনির বের করল। পেপারে সাদিয়াকে নিয়ে তরুণ-তরুণী পাতায় সচিত্র প্রতিবেদন। স্যুভেনিরেও সাদিয়ার হাস্যোজ্জ্বল ছবিসহ বিস্তারিত।

আজিম সাহেব বললেন, তুমি কি প্রমাণাদি সঙ্গে নিয়ে ঘোরো?

‘না, পেপারের তারিখ দেখেননি? গত মাসের নিউজ, আর স্যুভেনির তো এই সপ্তাহেই বেরোল।’

আজিম সাহেব আবার নির্বিকার হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। গাছ, ধানখেত, ঘরবাড়ি সব যেন শোঁ শোঁ করে চলে যাচ্ছে। ট্রেনের শব্দ আর গাছপালার শোঁ শোঁ করে সরে যাওয়ার মধ্যে একটা ছন্দ মেলালে মন্দ হয় না। মস্তিষ্ক কিছুটা ব্যস্ত রাখা যাবে।

সাদিয়া এবার কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। আজিম সাহেব তাকে ধারাবাহিকভাবে না শোনার ভান করছে। স্পষ্ট বার্তা, শাট ইউর মাউথ আপ। কিন্তু তাকে যে বলতেই হবে। এ যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার সাহস নিয়ে, ‘স্যার, আপনি কি খুব রাগ করেছেন? আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

আজিম সাহেব মাথা ঘোরালেন, আমার ধারণা, আমার সম্পর্কে তুমি ভালোই খোঁজখবর নিয়েছ। এটাও নিশ্চয় জানো, আমি একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট। এটা আমার পেশা। এর জন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে। রাস্তাঘাটে কাউন্সেলিং হয় না।

‘জানি, স্যার। আমি খবর নিয়েছি। আগামী এক মাস আপনার কোনো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেই।’

মেয়েটিকে এবার অসহায় দেখাচ্ছে। আজিম সাহেব খেয়াল করলেন, তাদের সামনের সিট দুটোতে কেউ ওঠেনি। অন্য কোনো স্টেশনে কি কেউ উঠবে? নাকি এটা সাদিয়ার প্ল্যান। একে একে জট খুলছে। সিট পরিবর্তন, স্টাফের স্যার স্যার সম্বোধন, দ্রুত সমস্যার সমাধান। সরকারি রেলের স্টাফরা কি সাধারণ যাত্রীদের স্যার সম্বোধন করে? আজিম সাহেব যে একজন শিক্ষক, সেটাও কোথাও লেখা নেই। তার মানে, স্টাফ আগেই জানত। পুরো ঘটনাটা প্রি-প্ল্যানড। পর্দার আড়ালে, সাদিয়া। মেয়েটার জেদ আছে।

আজিম সাহেব বললেন, সামনের সিট দুটো কি তুমিই কিনে রেখেছ? এ তো দেখছি সিনেমাটিক আয়োজন। তুমি কীভাবে জানলে আজকে এখন আমি এই ট্রেনেই যাব?

‘এটা আমার জন্য কোনো কঠিন ব্যাপার না, স্যার।’

আজিম সাহেবের মনে হলো, তাই তো। এটা আসলেই কোনো ঘটনাই না। ডিজিটাল এই যুগে মানুষের প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই। যেকোনো সময় যে কাউকে ট্র্যাক করা যায়। এত সিনেমাটিক আয়োজন, নিশ্চয় মেয়েটি গুরুতর অসুবিধায় আছে। আজিম লম্বা কয়েকটা দম নিয়ে নিজেকে গ্রাউন্ডেড করার চেষ্টা করলেন। তার কথা শুনতে হবে। কিন্তু এই শোনাকে কী বলে? শুনেই-বা কী লাভ হবে মেয়েটির? এটা তো কোনো অর্থেই পেশাদার কাউন্সেলিং হবে না। (চলবে)

সুবর্ণ এক্সপ্রেস গল্পটি আজহারুল ইসলাম-এর ‘হইচই’ গল্পগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠক হইচই বইটি পেতে পারেন রকমারি ডট কম সহ নিকটস্থ বইয়ের দোকানে।

আজহারুল ইসলাম
আজহারুল ইসলাম
+ posts

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট।
সহযোগী অধ্যাপক, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশিত বই

হইচই (২০১৯) 
মনোসন্ধি (২০১৭)
জাদুকাঠি (২০১৬) 

Post Author: আজহারুল ইসলাম

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। সহযোগী অধ্যাপক, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশিত বই হইচই (২০১৯)  মনোসন্ধি (২০১৭) জাদুকাঠি (২০১৬) 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।