আমি মুক্তভাবে বাঁচতে পারছি না

আমি মুক্তভাবে বাঁচতে পারছি না

নমস্কার। আমার বয়স ৪৫ আর আমার স্বামীর বয়স ৫৫। আমাদের বিবাহিত জীবন ২০ বছর। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর কাছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অনেক সহ্য করে থেকেছি। আমাদের একটি সন্তান আছে। আমি নিজেকে খুঁজে পেতে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা বেছে নিয়েছি। এভাবেই চলতে চলতে এক বন্ধুর দেখা পাই। আমরা সকলে মিলে সমাজ সেবার কাজেও ব্রতী হই। আমার স্বামী এই নিয়ে চরম অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু গত চার মাস ধরে এক অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করছি। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এখন উনি একেবারে কাদার মতো। যেন কোনদিন কিছুই হয়নি। 

আমার বাবার বাড়ির সাথে যে দুর্ব্যবহার এতদিন করে এসেছে হঠাৎ করেই তাদের খুব খেয়াল খাতির যত্ন শুরু করেছে। যে আমি কি খেলাম আদৌ খেলাম কিনা এখন বাড়াবাড়ি রকমের খেয়াল করে। আমি রিকশাতে স্কুলে যাওয়ার সময় বাস ধরতে যেতাম কিন্তু এখন আমি বেরোনোর আগেই উনি বাইক নিয়ে দরজায় তৈরি থাকেন। আবার ফেরার সময় বাস থেকে নামার পর দেখি প্রতিদিন বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকেন। উনি নিজেও পেশায় শিক্ষক। আগে বাড়িতে টিউশন পড়াত। এখন আমি বাড়ি ঢোকার পর আমার পাশে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন। আমি হোয়াটস্এ্যাপ কাকে করছি জানতে চান এবং তাকিয়ে দেখেন। আমি আমার কিছু কেনা কাটার থাকলে একা বাজারে যেতে দেবেন না সঙ্গে যাওয়ার জন্যে জেদ করবেন। উনি ওনার বন্ধু বান্ধব সামাজিকতা সব ছেড়ে আমার কাছে সবসময় বসে থাকেন। এটা আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। আমার নিজের কাজের জগতে এটা একটা প্রভাব ফেলছে। আমাদের সন্তান বাইরে পড়াশোনা করে। বাড়িতে শুধু আমরা দুজন। আমি ভেবেছিলাম এক মাসের মধ্যেই ওনার এই সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির স্বভাব যা আমরা এতদিন দেখে এসেছি তা চলে যাবে। কিন্তু প্রায় এরকম চার মাস হতে চলল। আমি জানতে চাই ওনার এই হঠাৎ পরিবর্তন কেন? এটা কি সত্যিকারের পরিবর্তন? না সাময়িক? আমি মুক্তভাবে বাঁচতে পারছি না। দমবন্ধ লাগছে। আমার কি করনীয় জানাবেন?

আমাদের পরামর্শ

আপনি সুন্দরভাবে গুছিয়ে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করেছেন। নানাবিধ অসুবিধা থাকা সত্বেও  এত বছর চরম ধৈর্য নিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন। আপনার সহনশীলতা আর বুদ্ধিমত্তার ভূয়সী প্রশংসা করছি। শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। যা আপনার সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। সমাজ সেবার মত মহতী কাজেও নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। 

আপনি আপনার স্বামীর বর্তমান আচরণ নিয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন। যে ভালোবাসা, যে যত্ন আরো আগে প্রত্যাশা করেছিলেন তা এত বছর পর হঠাৎ চোখের সামনে তাই অস্বস্তি আর অনিশ্চয়তা কাজ করছে মনের মধ্যে। দীর্ঘদিন অবহেলা আর কুটুক্তি দেখে দেখে আপনি হয়ত সেসব স্বাভাবিক মনে করে আপনার মতো করে বাঁচার উপায় করে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ নিজে নিজেই নিজের কাজ নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। এখন হঠাৎ স্বামীর এরকম অপ্রত্যাশিত আচরণে আপনি অস্বস্তিতে পড়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, আপনি আপনার স্বামীর এরকম অতি যত্নশীল আচরণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। কেননা, এরকম আচরণ আদৌ মন থেকে করছেন কি না তা নিয়ে আপনি সন্দিহান।  

এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে, নিজেদের মধ্যে মনখুলে কথা বলা। এখন আপনার স্বামী যা যা করছেন তা নিয়ে তার সাথে কথা বলুন। তিনি এত যত্নশীল আচরণ করছেন তাই আপনার কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনবেন আশা করছি। আলোচনায় আপনার অস্বস্তিবোধের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি হঠাৎ এরকম আচরণ কী কারণে করছেন অথবা তিনি এসব করে আপনার কাছ থেকে কী পেতে চান সেটাও জানতে চান। হতে পারে এত বছর পর তার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছে তাই এসব আচরণের মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমা করতে চাইছেন। আপনারা দুজনে এখন মধ্যবয়স অতিক্রম করছেন। এ বয়সে এসে অতীতের অনেক কিছুই নতুন করে উপলব্ধিতে আসে, নতুন চিন্তার জগৎ উন্মোচিত হয়। জীবনে কী পেলাম আর অন্যের জন্য কী করতে পারলাম, এসবের যোগবিয়োগ চলে। তাছাড়া আলোচনা করলে আপনার দমবন্ধ ভাবটাও কিছুটা কমবে। একইসাথে যদি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখেন। অর্থাৎ যে স্নেহ আর যত্ন তিনি করছেন তা হোক স্বল্প সময়ের বা দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু এটা বর্তমান সময়ের ঘটনা। আমরা যদি বর্তমানকে গুরুত্ব দিয়ে বাঁচতে পারি সেটা মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তি সঞ্চার করবে।

আপনার সন্তান ভালো আছে সেটাও অনেক ভালো লাগার বিষয়। আপনার মানসিক শক্তি আর বুদ্ধিমত্তার কাছে সমস্ত অস্বস্তি আর দুর্বলতা পরাজিত হোক এই কামনা করি। মনোযোগী মন-এ অকপটে আপনার কথা জানাননোর জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

Shammi Akter
শাম্মী আকতার
+ posts

এসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Post Author: শাম্মী আকতার

এসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।