নিজের মতো থাকুন

নিজের মতো থাকুন

চাইলেই কি আমরা সবসময় নিজের মতো থাকতে পারি?

একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আপনি কি প্রতিটি মুহুর্ত নিজের মতো করে কাটাতে পারেন? অনেক সময়েই হয়ত আপনি তা পারেন না। নিজের মতো থাকা মানে কি? এর মানে নিজের কাছে যা সঠিক মনে হয়, যা ভালো লাগে, তা কাজে, ভাবনায় ও কথায় প্রকাশ করা। অর্থাৎ, আপনি যা ভাববেন তাই করতে পারা আর যা করবেন তা স্বাচ্ছন্দে বলতে পারা। কিন্ত সবসময় কি তা করা যায়? যায় না। মনে হয়, এটা করলে যদি মানুষ আমাকে খারাপ ভাবে অথবা আমি এমন ভাবি জানলে যদি কেউ আমাকে পছন্দ না করে। তাই আমরা যতই বলি না কেন, আমি আমার মতো, আসলে নিজের মতো করে থাকা খুব একটা সহজ কাজ না।

সামাজিকতা রক্ষার জন্য বা অন্যের কাছে ভালো থাকার জন্য অনেকসময় আমরা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আচরণ করি। যা করলে সবাই ভালো বলবে বা যা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য, আমরা তাই করি। আবার অনেক সময়, নিজেকেই নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি বা নিজের খারাপ দিকগুলোকে অস্বীকার করতে চাই। মনে করি, যা প্রকাশিত হলে অন্যের কাছে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বা অন্যদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবে তা প্রকাশ করার প্রয়োজন কী? কিন্ত এমনটা করতে করতে আমরা একসময় নিজস্বতাকেই ভুলে যাই। অনেকসময় তা আমরা বুঝতেও পারি না। নিজের অজান্তেই পরিণত হই এমন মানুষে যার প্রকৃত পরিচয় সে নিজেই সৌজন্যতা ও অমায়িকতার বেড়াজালে হারিয়ে ফেলেছে।

কিন্ত আমাদের বুঝতে হবে যে, কোন মানুষই নিখুঁত না। তাই কারো পক্ষেই সবসময় সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব না। যেখানে মানুষের পক্ষে তার নিজের সব প্রত্যাশাও অনেক সময় পূরণ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না, সেখানে, অকারণেই সবার কাছে ভালো সাজতে গিয়ে, ক্রমাগত নিজের স্বাদ, আহ্লাদ বিসর্জন দেয়ার অর্থ হয় না।

সবার সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে গিয়ে নিজের প্রতি অন্যায় করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং উচিত, নিজের প্রতি সৎ থাকা, নিজের বিবেক-বুদ্ধিতে যা করা উচিত বলে মনে হয়, বা যা করতে ভাল লাগে, তাই করা। এতে যেমন আপনি খুশি থাকবেন, ভালো থাকবেন, তেমনি আপনার প্রতি অন্যদের প্রকৃত মনোভাবও বুঝতে পারবেন।

[আরো পড়ুনঃ আপনি কী মানসিক অসুস্থতার দিকে যাচ্ছেন?]

হয়ত নিজের মত থাকতে গেলে, মিথ্যে প্রশংসা না করে সত্য কথা প্রকাশ করলে, অনেকেই আপনাকে অপছন্দ করা শুরু করবে। যারা সুবিধাবাদী, তারা যখন দেখবে যে আপনি আর তার স্বার্থের কথা ভাবছেন না, তার কাছে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন না বরং নিজের আনন্দের জন্য কাজ করছেন, তখন সে নিজেই দূরে সরে যাবে। কিন্ত তখন যারা আপনার পাশে থাকবে, যাদের সাথে আপনার মতের মিল হবে, যারা আপনাকে পছন্দ করবে, তারা হবে আপনার প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদেরকেই আপনার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

নিজের মতো করে থাকার অর্থ এই নয় যে আপনি অন্যের মনে কষ্ট দিয়ে হলেও নিজের উদ্দেশ্য সাধন করেবেন। এর অর্থ হলো, নিজের এবং অন্যের সাথে সততা বজায় রাখা। যখন আপনার কথায়, কাজে, ভাবনায় মিল থাকবে, তখন মানুষ যেমন আপনাকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবে, তেমন আপনিও নিজেকে নিজে নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন।

তবে নিজস্বতা কিন্ত কোন স্থায়ী বৈশিষ্ট্য না। আপনার কাছে এখন যা সঠিক মনে হচ্ছে, ২ বছর পরে তা মনে নাও হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না, কেননা মানুষ প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়। এ পরিবর্তন গুলো মাথায় রেখে, যখন আপনি নিজের মতো করে থাকতে চেষ্টা করবেন, তখন কিন্ত আপনি নিজেকেই নিজে গভীরভাবে চিনতে পারবেন, নিজের ভালো ও খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হতে পারবেন। সেগুলো বিবেচনায় রেখে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করতে পারবেন। আর এর মধ্য দিয়েই আপনি খুঁজে পাবেন নিজের মতো করে থাকার আনন্দ, যা একান্তই আপনার নিজস্ব।

 

নাসরিন শীলা
+ posts

আমি শীলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। বই পড়তে ভালবাসী। পড়তে পড়তেই লেখালেখির শুরু। পড়া আর লেখা,চালিয়ে যেতে চাই আজীবন।

Post Author: নাসরিন শীলা

আমি শীলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। বই পড়তে ভালবাসী। পড়তে পড়তেই লেখালেখির শুরু। পড়া আর লেখা,চালিয়ে যেতে চাই আজীবন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।